যে ১০টি ঔষধি গাছ আপনার বাসায় রাখা উচিত । নিত্যপ্রয়োজনীয় ঔষুধি গাছের গুনাগুণ ও উপকারিতা
যে ১০টি ঔষধি গাছ আপনার বাসায় রাখা উচিত বা নিত্যপ্রয়োজনীয় ঔষুধি গাছের গুনাগুণ ও উপকারিতা আজকের এই পোস্ট থেকে আমরা বেশ কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ গাছ নিয়ে আলোচনা করব, যেগুলো থেকে আমরা দৈনিক জীবনে খুব উপকৃত হবো ।
যে ১০টি ঔষধি গাছ আপনার বাসায় রাখা উচিত |
শুধুমাত্র গাছের উপকারিতা নিয়ে যে আলোচনা করব তেমন নয়,আমরা গাছগুলো লাগানোর নিয়মগুলো সম্পর্কেও জানতে পারবো।
নিচের যে অংশটুকু পড়তে চানঃ-
- গাছের বা লতা-পাতার ওষুধি গুনাগুণ
- ওষুধি গাছের ব্যবহার এবং ইতিহাস
- প্রতিদিনে চারপাশে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি গাছ
- 'সুপার ফুড' সজনে বা সজিনা পাতার ঔষধি গুনাগুণ
- রসালো কান্ডযুক্ত এলোভেরার ঔষধি ব্যবহার
- ঔষধি হিসেবে রাঙা মেহেদীর ব্যবহার
- গোলপাতাযুক্ত থানকুনির ঔষধি গুনাগুণ ও উপকারিতা
- ওষুধি উদ্ভিদ দূর্বা ঘাসের উপকারিতা
- মহা-উপকারি পাথরকুচি
- তিক্তস্বাদের মহাঔষধি নিম
- ধনে পাতার ঔষধি গুনাগুণ এবং উপকারিতা
- সতেজতার রানী পুদিনা পাতার ঔষধি গুনাগুণ
- গ্রাম-বাংলায় অতি পরিচিত ভাঁট ফুলের ঔষধি ব্যবহার
- শেষ কথা
লতা-পাতা বা গাছের ওষুধি গুনাগুণ
সৃষ্টির সেই আদিমকাল থেকেই মানুষ বিভিন্ন ধরনের গাছপালা বা লতাপাতা, শুধু যে
খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করেছে তা কিন্তু নয়,,অনেক উপকারি গাছ-লতাপাতা থেকে বিভিন্ন
ধরনের ঔষধি গুনাগুন নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে শিখেছে।
গাছ-গাছরা থেকে আয়ুর্বেদিক এবং ইউনানী শাস্ত্র মতে যে ঔষধি গুনাগুন গুলো পাওয়া
যায়,সেগুলো ব্যবহারে আলাদা কোন ক্ষতি নেই বলে সেই প্রাচীনকাল থেকেই প্রজন্ম হতে
প্রজন্মের মানবকুল এগুলো নিজেদের দরকারে গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করে আসছে।
বাংলাদেশে প্রায় ৮০০/৯০০ এমন উদ্ভিদের প্রজাতি পাওয়া যায় যেগুলো ওষুধি গুণাগুণ
সম্পূর্ণ।
ওষুধি গাছের ব্যবহার এবং ইতিহাস
এমন অনেক ঔষধি সম্পন্ন গাছ-গাছরা, লতা-পাতা,ফুল কিংবা ফল আছে যেগুলো আমরা
আমাদের সরাসরি বা গরম পানির সাথে অথবা সুমিষ্ট মধুর সাথে অথবা অন্য কোন
খাবারের সাথে মিশিয়ে উপকারে ব্যবহার করতে পারি।
আরো পড়ুনঃ
গাছের কলম বা কাটিং করার সহজ পদ্ধতি দেখুন
সৃষ্টি সুচনালগ্ন থেকে মানবকুল যত দ্রুত হারে তাদের জিবন-যাত্রায় পরিবর্তন
এনেছে,সেটির সাথে নানা ধরনের ওষুধ,রোগ-বালাই তাদের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে,
আর এগুলো থেকে মুক্তি পেতেই তারা বার বার প্রকৃতির ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছে।
নতুন নতুন রোগ বালাইয়ের জন্য গাছপালার ঔষধি গুণগুলোকে নতুনভাবে আবিষ্কার
করে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করা শিখেছে।।
প্রতিদিনে চারপাশে পাওয়া যায় এমন কয়েকটি লতা বা গাছ
দৈনিক চলা-চলে, রাস্তা-ঘাটে, বন-জঙ্গলে এমন অনেক গাছপালা; লতা-পাতা থাকে
যেগুলোর বেশিরভাগ সম্পর্কেই আমাদের ধারণা অতি নগণ্য বা নেই বললেই চলে। আমাদের
ধারণা নেই কিন্তু চারপাশে এমন অনেক ছোট -বড় রংবেরঙের উদ্ভিদ আছে যেগুলোর
মধ্যে অনেকগুলো নানা ধরণের অসুখ নিরাময়কারী উপাদান বিদ্যমান,যেগুলো আমাদের
জীবনকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে খুব উপকারি ভুমিকা রাখতে পারে।
ঘৃত কাঞ্চন, মেহেদী, দুর্বা ঘাস, সজনে পাতা, তুলসী, নিম,ধনে পাতা,পাথরকুচি
ইত্যাদি এমন অনেক ধরনের ছোট-বড় গাছ-গুল্ম, লতা-পাতা সম্পর্কে অল্পবিস্তর জেনে
থাকলেও বিস্তারিতভাবে আমরা অনেকেরই জানিনা, ,তাই আমরা নিজেদের নানা সমস্যা বা
অসুখ নিরাময়ে সঠিক ভাবে এগুলো ব্যবহারে এখনো অজ্ঞ।
সুপার ফুড' সজনে বা সজিনা পাতার ঔষধি গুনাগুণ
সজনে এমন একটি গাছ যার প্রতিটি অংশ আমাদের দেহের পূরণ বৃদ্ধি সাধন ইত্যাদি নানা
কাজে আসে।এটিতে অধিক পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেলস গুলো থাকে যেগুলো আমাদের
দেহের জন্য অত্যাবশকীয়। পটাশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি
পুষ্টি কর ধাতু উপাদান থাকে এই সজনে গাছের কান্ডে এবং পাতায়।দেহের অনেক হরমোন
থাকে যে হরমোন গুলোকে সজনে পাতা কর্মক্ষম রাখতে সাহায্য করে।
যারা ডায়াবেটিস বা বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য সজনের মূল বেশ ভালো
পথ্য। হাইপার টেনশনে কষ্ট পেলেও, সজনে পাতার গুড়া খুব বেশি উপকারে আসতে
পারে।যদি প্রতিদিন এক চামচ করে সজনে পাতার গুড়ো খাওয়া হয়,তবে রক্তের সুগারটাও
অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। হাত-পা জ্বালাপোড়া করা, ত্বক নষ্ট হয়ে
যাওয়া, ব্রণে বা মেস্তার দাগ দূর পাতা গুড়ো করে পানিতে মিশিয়ে খেতে পারলে উপকার
পাওয়া যায়। এটিকে শাক হিসেবে খেলে দেহের পুষ্টিহীনতা অনেকটাই রোধ হয়।
বড় সজনে গাছ থেকে একটি পরিপক্ক ডাল কেটে দোঁয়াশ অথবা
এটেল-দোঁয়াশ মাটিতে এই ডালটি লাগালে কয়েক মাসের মধ্যেই একটি আলাদা গাছ
পাওয়া সম্ভব।যে গাছের শাক,বাকল,কান্ড,মূল, ডাটা সবগুলোই পুস্টিগুণে ভরা; যার
কারণেই একে সুপার ফুড বলে অভিহিত করা হয়।
রসালো কান্ডযুক্ত এলোভেরার ঔষধি ব্যবহার
দেখতে ক্যাকটাস বা ফনিমনসার মতো,ছোট ছোট কাটা থাকে রসালো পাতাগুলোর
কান্ডে।ধারণা করা হয়, প্রাচীন আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলে এটির
উৎপত্তি।গাছ-গাছালির পরিচয় থেকে জানা যায়,মিশরে বহু আগে থেকে এ উদ্ভিদ ব্যবহৃত
হয় এটির ওষুধি এবং উপকারি গুণের কারণে। বর্তমানে নানা ধরনের সতেজতা সমৃদ্ধ
পানীয় তৈরিতে, রূপচর্চার কাজে এবং ঔষধি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এটির
মধ্যে পাওয়া যায়। শীতকালে ত্বকের সুরক্ষাতে ও এটি ব্যবহার করা হয়।
এছাড়াও মাড়ি ও দাঁতের যত্নে,দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে,হার্ট সুস্থ
রাখতে,রক্ত পরিস্কারে, চুলকে সুন্দর ও সিল্কি করতে, ক্যান্সার প্রতিরোধে,
কোষ্ঠকাঠিন্য জাতীয় ইত্যাদি যাবতীয় সমস্যা সমাধানে অ্যালোভেরা বা ঘৃত
কাঞ্চনের ব্যবহার করা যায়।অতি উপকারী এই উদ্ভিদটি খুব সহজেই আমরা আমাদের ঘরে বা
বারান্দায় ছোট টবে লাগিয়ে, প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারি।
এক্ষেত্রে সামান্য বালি এবং কোকো পিটের সাথে মাটি একসাথে মিশিয়ে একটি ছোট
অ্যালোভেরা চারা লাগিয়ে পরিমান মতো পানি দিলে, দেখা যাবে খুব অল্প দিনের মধ্যেই
গাছটি বড় হয়ে উঠছে,এবং ওই ছোট চারার চারপাশ দিয়ে আরও ছোট ছোট কুড়ি বের হচ্ছে
যেগুলো প্রতিটিই এক-একটি অ্যালোভেরা উদ্ভিদে রূপান্তরিত হয়।এভাবে নিজের ঘরের
সুন্দরতা বৃদ্ধের সাথে সাথে একটি অতি উপকারী উদ্ভিদ থেকে আমরা আমাদের প্রয়োজন
মেটাতে পারি।
ঔষধি হিসেবে রাঙা মেহেদীর ব্যবহার
মেহেদির কথা মনে আসলেই আমাদের চোখের সামনে লাল কিংবা খয়েরি রং ভেসে ওঠে অথবা
মনে পড়ে নিজের বা অন্যের মেহেদি রাঙ্গা হাত।কিন্তু রঙ সম্পর্কে জানলেও আমরা
এটির অন্যান্য গুণাগুণ সম্পর্কে অনেক কিছুই জানিনা।মেহেদী গাছের বাকলের রস
পেটের প্লিহা এবং জন্ডিস রোগ নিরাময়ে ভালো ভুমিকা রাখে।আবার হাত বা পায়ের নখের
সমস্যা, পা ফাটা, দেহের কোন অংশের ফাটা দাগ দূর করতেও মেহেদি পাতা বা তার রস
ব্যবহার করা হয়।
গরমের দিনে শরীরকে শীতল রাখতে, দেহের কোন অংশের ব্যথা নিরাময়ে,চুল পড়া
কমাতে,পানি পচা-রোগে,এমনকি রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে রাখতেও মেহেদি পাতা বা কান্ড
ব্যবহার করা যায়। মেহেদী এমন একটি গাছ যার উপকারী ভূমিকা ব্যাখ্যা করে শেষ করা
যাবেনা। মেহেদি গাছের চারা আমরা খুব সহজেই লাগাতে পারি আমাদের বাসার ছাদে অথবা
বারান্দার ছোট কোণে। এতে বেলে-দোঁয়াশ মাটির সাথে সামান্য জৈব সার ব্যবহার করলে
মেহেদী গাছে খুব ভালো পাতা আসে, যা দিন শেষে আমাদের ই প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য
করে।
গোলপাতাযুক্ত থানকুনির ওষুধের গুনাগুণ ও উপকারিতা
ছোট্ট ছোট্ট গোল পাতার; থানকুনি,যা মাঠে-ঘাটে, ডোবা বা জলাশয়ের ধারে একা একাই
হয়ে থাকে বলে আমাদের অনেকের চোখেই পড়ে না,আবার এটির আকৃতি ও খুব ছোট হওয়ায়
এটি সম্পর্কে অনেকের ই ধারণা খুবই কম। মস্তিষ্কের বিকাশ ঘটাতে,লিভারকে সুস্থ
রাখতে, ওজন কমাতে,রক্ত চাপ নিয়ন্ত্রনে, পেটের আলসার প্রতিরোধ করে থানকুনি পাতা।
এটির গুরুত্ব যে কত বেশি তা আমরা এখন বুঝতেই পারছি।
যে ১০টি ঔষধি গাছ আপনার বাসায় রাখা উচিত । নিত্যপ্রয়োজনীয় ঔষুধি গাছের গুনাগুণ ও উপকারিতা |
এটিতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস,পটাশিয়াম, আয়রন ও বিটা ক্যারোটিন
পাওয়া যায়, যেগুলো আমাদের দেহের জন্য খুবই দরকারি পুষ্টি উপাদান। পেটের আমাশয়
নিরাময়েও এ পাতার ব্যবহার করা হয়।প্রাচীন আয়ুর্বেদিক শাস্ত্র থেকেও আমরা এ
পাতা সম্পর্কে জানতে পারি,আমাদের উচিত নিয়মিত এ পাতা খাওয়া বা এ পাতার রস
সামান্য হলেও গ্রহণ করা।
ছোট ছোট পাতার এ গুল্ম-লতা জাতীয় উদ্ভিদটি আমরা খুব সহজেই আঙিনার এক কোণে
অথবা বেলকনিতে একটি ছোট টবে লাগাতে পারি এবং এটি থেকে উপকার পেতে পারি। লাগানোর
ক্ষেত্রে দোআশ অথবা বেলে-দোঁআশ মাটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
ওষুধি উদ্ভিদ দূর্বা ঘাসের উপকারিতা
আগাছা বা অন্য কোন ঘাসের মতোই অনেকে এ ঘাসকে অতি অপ্রয়োজনীয় ও নগণ্য হিসেবে
মনে করে, তাই ওটি অযত্ন -অবহেলায় বেড়ে ওঠে মাঠ-ঘাট, রাস্তার পাশে অথবা আঙ্গিনার
কোণে।যেকোনো রক্ত ক্ষরণে বা কেটে যাওয়া রক্তপাত বন্ধ করতে, চুল পড়া,দাঁতের বা
মাড়ির রোগে, আমাশয় রোগেও এ ঘাসের উপশমকারি গুণ আমাদেরকে সাহায্য
করতে পারে।
যদি কারো বমি বমি ভাব হয়,দু-তিন চামচ এ ঘাসের রসের সাথে একটুখানি চিনি মিশিয়ে
খেলে, তাড়াতাড়ি ই বমি বমি ভাব কেটে যায়।আবার শ্বেত প্রদাহ জনিত দুর্বলতা কাটাতে
এ ঘাসের ব্যবহার করা যেতে পারে।চুল উঠা বা টাক পড়া বন্ধ করতেও এ ঘাসের ব্যবহার
করা যেতে পারে এবং উপকার ও যে পাওয়া যায়, তা অনেকের কাছেই প্রমাণিত।
মহা-উপকারি পাথরকুচি
পাথরকুচি এমন একটি উদ্ভিদ যেটি আমাদের কিডনির পাথর,গলগন্ড প্রতিরোধে, পেটে
গ্যাস হলে কিংবা প্রস্রাব এর সমস্যায় ব্যবহার করে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
পাথরকুচি পাতা চায়ের মধ্যে দিয়ে খেলে ;সে চা আমাদের শরীরের নানা ধরনের ক্ষতিকর
ধাতু অপসারণে ভুমিকা রাখতে পারে,এবং নালিপথগুলোতে সজীবতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য
করে।আমাদের লিভারের নানা ধরনের সমস্যায় ও এপাতার জুস অনেক উপকারি বলে বিবেচিত।
এছাড়া পিত্তথলির সমস্যা, সর্দি জনিত আঁচিল সদৃশ 'মেহ' অপসারণে, মৃগী রোগীর
জন্য, পুরাতন সর্দি নিরাময়ে এটির রসের সাথে মধু মিশিয়ে খেলে বিশেষ উপকার পাওয়া
যায়।ত্বকের জ্বালাপোড়া কমানো,ব্রনের দাগ দূরীকরণে কিংবা শিশুর পেট ব্যথা
সারাতেও এ পাতার ব্যবহার করা হয়। বর্তমান সময়ে আমরা সকলেই কমবেশি ' অর্শ বা
পাইলস ' রোগ সম্পর্কে জানি যা নিরাময়েও এ পাতার ব্যবহার করা যেতে
পারে।
আরো পড়ুনঃ
মাত্র ৩ সপ্তাহে ওজন কমিয়ে ফেলুন
আমাদের বারান্দায় বা আঙিনায় পাথরকুচি উদ্ভিদের পাতা লাগালেই একাধিক ছোট ছোট
চারা বা কুড়ি পাওয়া যায় যেগুলো আলাদা আলাদা গাছ হিসেবে কয়েক মাসের মধ্যেই বড়
হতে থাকে।
তিক্তস্বাদের মহাঔষধি নিম পাতার উপকারিতা
নিম এমন একটি উদ্ভিদ যার;পাতা থেকে শুরু করে ছাল, শিকড়,ফুল এবং ফল সব কিছুই
পুষ্টিগুণে ভরা।যদি নিয়মিতভাবে সকালে খালি পেটে নিমপাতা খাওয়া যায়,তাহলে
নানাভাবে আমাদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে। নিমে প্রচুর পরিমাণে
এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিফাংগাল উপাদান থাকে, যা দেহের কোন অংশে ঘা কিংবা
কেটে গেলে গরম পানির সাথে ব্যবহার করলে ঘা শুকাতে সময় কম লাগে এবং
ইনফেকশন প্রতিরোধ করে।
দেহের ওজন কমাতে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে, পেটের ব্যাথা এবং আলসার,হার্ট ও
ধমনীর রোগ নিরাময়ে মহাঔষধি হিসেবে কাজ করে নিম পাতা বা তার বাকল। এছাড়া
লিভারের সমস্যা দূরীকরণে সাহায্য করে নিম গাছের পাতার রস,,কিন্তু অবশ্যই পরিমাণ
মতো গ্রহণ করতে হবে, নচেৎ উপকার না-হয়ে অপকার ও হতে পারে।নিমে 'ফ্লাইবোনাটস্'
নামক উপাদান রয়েছে যা মানব দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
রক্ত পরিস্কারেও ভূমিকা রাখতে পারে নিমপাতার রস।এটিতে আছে ফসফরাস,
ক্যালসিয়াম,ভিটামিন-সি, এমাইনো এসিড সহ আরও বহু পুষ্টি উপাদান, যেগুলো দেহের
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।প্রতিদিন এটির রস খুব সামান্য পরিমান
সেবন করলে ডায়াবেটিস রোগীর উপাকারে আসতেও পারে নিম বা নিমের পাতা।
এটি এমন একটি গাছ যেটি যেকোনো পরিবেশে যেকোনো রকম মাটিতে হতে পারে,তাই আমরা
বাড়ির ছাদে অথবা পতিত জমি বা আঙিনায় এটির চারা রোপন করতে পারি,এতে যেমন আমাদের
উপকার হবে একইসাথে পরিবেশ ও সুন্দর সতেজ থাকবে।
ধনে পাতার ঔষধি গুনাগুণ এবং উপকারিতা
ধনে পাতার কথা মাথায় আসলেই একটা আলাদা রকম ঘ্রাণের বিষয়টি আমাদের মাথায় ঘুর-পাক
খেতে থাকে, আসলে এটি খুব ভালো ওষুধি গুণ সম্পন্ন,একটি ছোট জাতের উদ্ভিদ। আমাদের
দেশে বেশ জনপ্রিয় এটি কারণ এটি যেকোনো খাবারের স্বাদকে অনেক গুনে বাড়িয়ে
দেয়।এটির সবুজ রঙের পাতা এবং নরম কান্ড যেখানে নিউট্রেশনস্ হিসেবে পটাশিয়ামের,
ইলেকট্রোলাইট থাকে যা আমাদের দেহের জন্য অতি দরকারি পুষ্টি উপাদান।
যে ১০টি ঔষধি গাছ আপনার বাসায় রাখা উচিত । নিত্যপ্রয়োজনীয় ঔষুধি গাছের গুনাগুণ ও উপকারিতা |
এটি কিন্তু ফাইবার-রিচ একটি উদ্ভিদ যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে বেশ ভালো
সাহায্য করে।সাধারণত ধনেপাতা খালি মুখে খাওয়া যায়না,তাই তরকারিতে দিয়ে কিংবা
প্রায় সকল ধরনের ভর্তায় এটি ব্যবহার করা যেতে পারে। সালাদের সাথে ধনেপাতা
একসাথে দিলে খাবারে অন্যরকম একটা ফ্লেবার আসে,যা সত্যিই খুব সুন্দর ও সুস্বাদু
এবং অবশ্যই পুষ্টিকর।আঁশ বা ফাইবার থাকায় ধনেপাতার চাহিদা আমাদের জন্য দরকারিই
বটে।রোগ বা অন্য কারণে মুখের স্বাদ চলে গেলে,ধনে পাতার মাধ্যমে সেটিও ফিরিয়ে
আনা সম্ভব।
এটি আমরা আমাদের বাড়িতে ছোট টবেই লাগাতে পারি যেকোনো রকম মাটিতে,ছোট ছোট গুল্ম
জাতীয় উদ্ভিদ হওয়ায় একসাথে অনেকগুলো বীজ লাগালে একসাথে অনেকগুলো গাছ পাওয়া যাবে
এবং আমরা তা খাদ্য বা ঔষধি দ্রব্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো।
সতেজতার রানী পুদিনা পাতার ঔষধি গুনাগুণ
সবুজ রঙের পুদিনাতে ম্যাগনেসিয়াম,ফসফরাস, ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ইত্যাদি
ধরণের অতি উপকারী পুষ্টি উপাদান থাকে এবং আমাদের শরীরের জন্য দরকারি মিনারেলস ও
এতে বিদ্যমান।আমাদের কিন্তু অনেক সময় ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম বা পেটে
যন্ত্রণা করে,পাকস্থলীতে ব্যথা হয়, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা হয় এসব নানা সমস্যা
দূর করতে কিন্তু পুদিনা পাতার জুড়ি নেই। গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থাকলে অনেকটা
দূর করে থাকে এই পুদিনা পাতা।
শিশুর ব্রেন ডেভেলপমেন্টে বা মেধা-বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে
পুদিনা পাতা বা এর রস। রক্তের ইনফেকশন কিংবা শরীরের অন্য জায়গায় যদি ইনফেকশন
হয়, তা দ্রুতই সারিয়ে তুলতে পারে পুদিনা।সন্তান জন্ম লাভের পর মায়ের বুকে অনেক
সময় ব্যথার উদ্ভব ঘটতে পারে, ,প্রতিদিন নিয়ম করে পুদিনা পাতার রস খেলে সে
ব্যাথা থেকে আরোগ্য লাভ করা যায়।আমরা যদি পুদিনা পাতার রস বা পুদিনা
পাতাকে নিয়মিত খাদ্য তালিকায় রাখতে পারি তাহলে ঠান্ডা জনিত নানা সমস্যা
সমাধানে কিংবা চুলের সৌন্দর্য বর্ধনে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে তা
ব্যবহার করতে পারি।
যদি আমরা পুদিনা পাতা ঘরের ছোট টবে লাগাতে চাই তাহলে সামান্য মাটিতেই তা সম্ভব
,আবার অনেক সময় শুধুমাত্র পানিতে রেখে দিলেও পুদিনার নতুন ডগা গজায়,এছাড়া ছাদে
অথবা আঙিনার এক কোণে কয়েকটি ডগা লাগালেই অনেকগুলো হয়ে যায় কয়েক দিনের মধ্যে।
সতেজতা সমৃদ্ধ শরবত, ভাতের ও ভর্তার সাথে,সালাদ এর সাথে এবং আরো নানাভাবে
পুদিনা পাতা আমরা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করতে পারি।
গ্রাম-বাংলায় অতি পরিচিত ভাঁট ফুলের ঔষধি ব্যবহার
ভাঁটের গাছ এমন একটি গাছ যা রাস্তা -ঘা; বিশেষ করে গ্রামে-গঞ্জে সহসাই দেখা
যায়, যেটির সবথেকে আকর্ষণীয় দিকটি সুন্দর সাদা সাদা ফুল,যেগুলো দেখলেই মন ভালো
হয়ে যাবে যেকারো। এটির মধ্যে জ্বর,ডায়রিয়া,কোলেস্টেরল,রক্তের সুগার
নিয়ন্ত্রণে রাখার ঔষধি গুনাগুন এবং ক্যান্সার প্রতিরোধী উপাদান
বিদ্যমান।ত্বকের চুলকানি,উদরাময় নিয়ন্ত্রণেও এটি একটি অব্যর্থ পথ্য হিসেবে
পরিচিত।
বমি বমি ভাব হলে এটির রস পরিমাণ মতো খেলে বমি ভাব কেটে যায়। আমাদের এদেশের
পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষজন অনেক আগে থেকেই ভাঁটের গুণাগুণ সম্পর্কে পরিচিত তাই
তারা সুন্দর ভাবে এটির ঔষধি গুনাগুন নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে শিখেছে
অনেক আগে থেকেই। এটি যদি আমরা সংগ্রহে রাখতে চাই,রাস্তা-ঘাটে যেখানে অনেকগুলো
আছে সেখানে থেকে ১/২ দুটি এনে যেকোনো স্থানে লাগালেই কয়েকমাসের মধ্যে সে
জাইগাটিতে নতুন নতুন ভাঁট গাছের জন্ম হয় এবং সব গুলো গাছে যখন ফুল ফুটে একসাথে
, তখন চারদিকে ঘ্রাণ ছড়াবে,দেখতে সুন্দর লাগবে আর নানা ঔষধি গুণ গুলো তো
আছেই।
শেষ কিছু কথা
গাছ-গাছালি,লতা-গুল্ম পরিবেশের এমন একটি উপাদান, যেগুলো না থাকলে হয়তো এই গ্রহে
কোন ধরনের কোন প্রাণির --- জন্ম-বিকাশ-বিস্তৃতি কিংবা আমাদের উদ্ভব ই ঘটতো না।
তারা তাদের জীবন ধারণের জন্য প্রতিটি জীবের জীবনবায়ু হিসেবে পরিচিত "অক্সিজেন"
পরিবেশে নির্গত করে,, সেটির মাধ্যমেই আমরা সকলে জীবন-ধারণ করে বেঁচে
থাকি।
আমাদের উচিত আমাদের নিজেদের প্রয়োজনেই গাছ-গাছালির সাথে সম্পর্ক সুন্দরও
নিয়ন্ত্রিতভাবে গড়ে তোলা,, এতে উদ্ভিদকূল থেকে আমরা অন্যান্য প্রয়োজনের
সাথে সাথে নানা ধরনের ঔষধি গুণাগুণোর মাধ্যম উপকৃত হতে পারবো, ইনশাআল্লাহ
! সুন্দর এই পৃথিবী জুড়ে যখন মানবকূল ও উদ্ভিদকূল একসাথে সহাবস্থায়
থাকবে, তখনই সুন্দর আগামীকাল সূচনা হবে।
স্ক্রোলিং ষ্টেশন ২৪-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url