কিভাবে ঘরে বসে মাশরুম চাষ করতে হয়
কিভাবে ঘরে বসে মাশরুম চাষ করতে হয় আজকের এই পোস্টে আমরা মাশরুম চাষ নিয়ে
আলোচনা করব।মাশরুম আমাদের মধ্যে কারো কাছে ছত্রাক, কারো কাছে ব্যাঙের ছাতা আবার
কারো কাছে একটি সুস্বাদু সবজি হিসেবে পরিচিত।
কিভাবে ঘরে বসে মাশরুম চাষ করতে হয় |
এটি আসলে একটি উচ্চ পুষ্টিগুণ সম্পন্ন পরজীবী ছত্রাক।যত দিন যাচ্ছে মানুষের খাদ্য
তালিকায় পরিবর্তন আসছে এবং মাশরুম তেমন ই একটি ছত্রাক যার বেশ কিছু প্রজাতির
খাবারের জন্য সারা বিশ্বে জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে দিন কে দিন।
নিচের যে অংশ পড়তে চানঃ
- মাশরুমের উৎপত্তি কোথা থেকে
- মাশরুম আসলে কি
- মাশরুম চাষ কেন করব
- মাশরুমের কতগুলো প্রকার
- কিভাবে ঘরে বসে বোতাম মাশরুম চাষ করব
- সুস্বাদু পোয়াল মাশরুম ঘরে বসে চাষ করুন
- কিভাবে ঘরে বসে মিল্কি বা দুধ মাশরুম চাষ করতে হয়
- ওয়েস্টার বা ঝিনুক মাশরুম
- বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায়
- ঘরে বসে মাশরুমের স্পন বা বীজ উৎপাদন পদ্ধতি
- মাশরুমে পোকামাকড় ও রোগ দমন পদ্ধতি
- কিভাবে মাশরুম রান্না করতে হয়
- শেষ কথা
মাশরুমের উৎপত্তি কোথা থেকে
প্রাচীন গ্রিক শব্দ 'মাইকাস' থেকে 'মাশরুম' শব্দটির উৎপত্তি ঘটেছে। খাবার
যোগ্যতা,সুস্বাদু ছত্রাকগুলো মাশরুম হিসেবে পরিচিত।আর যেগুলো খাওয়া যায় না
বিষাক্ত এমন ছত্রাকগুলোকে 'টোড স্টূল' বলা হয়। আদিকাল থেকেই মাশরুমের
সাথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ কোন না কোন ভাবে পরিচিত ।
মাশরুম আসলে কি
মাশরুম একপ্রকার ছত্রাক।যা অন্যান্য ছত্রাকের মতো আর্দ্রতা পছন্দ করে এবং সে
রকম পরিবেশেই জন্মে থাকে।মাশরুম এমন একটি সবজি যা একই সাথে সুস্বাদু পুষ্টিকর
খাদ্যগুণ সম্পন্ন এবং ঔষধি গুণসম্পন্ন হয়ে থাকে।আবার এমন অনেক মাশরুম আছে
যেগুলো অত্যাধিক মাত্রায় বিষাক্ত এবং এগুলো গ্রহণ করলে প্রাণনাশের হুমকি
পর্যন্ত দেখা দিতে পারে।
আরো পড়ুনঃ
একটি মাশরুম কাটলে সেখান থেকে কয়েকটি মুখ বের হয়ে থাকে এজন্য মিশরীয়রা
বিশ্বাস করতেন অমরত্ত্ব লাভের উদ্ভিদ হলো এই মাশরুম।হাজার বছর আগে থেকে চীনে
এবং জাপানে ঔষধ বা ঔষুধের উপাদান হিসেবেও ব্যবহার হয়ে আসছে। 'দেবতার খাদ্য'
হিসেবে বিশ্বাস করতেন রোমানরা।
বাণিজ্যিকভাবে ১৬৫০ সাল থেকে ফ্রান্সে প্রথম মাশরুমের উৎপাদন শুরু হয়,এরপর
সেখান থেকে সমগ্র ইউরোপ এবং পরবর্তীতে আমেরিকা হয়ে সারা বিশ্বে মাশরুম এবং এটির
চাষ ছড়িয়ে পড়তে থাকে।
মাশরুম চাষ কেন করব
দিন যত যাচ্ছে পৃথিবীতে জীবের উপস্থিতি তত বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।উন্নতর জীব
হিসেবে মানুষের সংখ্যা বা জনসংখ্যা এতো দ্রুত হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যে খাদ্য সংকট
দেখা দিচ্ছে।যা আমাদের পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চরম আকার ধারণ করেছে।এর ফলে খাদ্য
পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হচ্ছে ।
কৃষি পণ্য সমূহের দাম অত্যাধিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় মানুষ তাদের পুষ্টি চাহিদা
পূরণ করতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে দরিদ্র পরিবারের পক্ষে পুষ্টিকর খাবারের
সংস্থান করা এবারে দুঃসাধ্য কিংবা অসম্ভব একটি বিষয়ে রুপ নিচ্ছে।মাশরুম এমন
একটি খাদ্য যা গ্রামীণ এবং শহরের যেকোনো পরিবেশই জন্মাতে পারে ।
মাশরুম খাদ্যদ্রব্য হিসেবে মাংস ও শাক-সবজির মাঝামাঝি অবস্থান করে।কারণ এটির
মধ্যে মাংসের ও শাকসবজির উভয়েরই পুষ্টি গুণাগুণ রয়েছে।এটিতে বিদ্যমান
প্রোটিন অন্য নিরামিষ প্রোটিনের চেয়ে উন্নত মানের,তবে প্রাণিজ আমিষ প্রোটিনের
চেয়ে সামান্য নিম্নমানের।
আরো পড়ুনঃ
কম ক্যালরি থাকার জন্য হৃদরোগের রোগীর জন্য একটি সহায়ক খাদ্য এটি। মাশরুম
রক্তশূন্যেটা থেকে রক্ষা করে,এছাড়াও ক্যালসিয়াম পটাশিয়াম সোডিয়াম লৌহ
যথেষ্ট পরিমাণে থাকায় এটি হাড়ের গঠন এবং বৃদ্ধি তেও সাহায্য করে।এছাড়া এটির
চাষ কৌশল সহজ হওয়ায় যেকোন পরিবেশে যে কোন অবস্থাতেই চাষ করে প্রতিবন্ধী
যুবক/যুবতি থেকে শুরু করে যে কেউ স্বনির্ভর হতে পারে।
মাশরুমের প্রকারভেদ
পরিবেশের মাশরুমের কয়েক হাজার প্রজাতি রয়েছে তার মধ্যে ৮ থেকে ১০ টি জাতকে
বাণিজ্যিকভাবে চাষাবাদ করা হয়।সেগুলোর মধ্যে বেশ আমি শর্করা চর্বি ভিটামিন ও
মিনারেল এবং সুস্বাদু স্বাদের বিচারে চার প্রকার মাশরুম সম্পর্কে আমরা জানব।
যেগুলো বাংলাদেশের প্রকৃতিতে চাষযোগ্য এবং ফলনশীল বলেই স্বীকৃত। যথা:
- বোতাম মাশরুম
- সুস্বাদু পোয়ালা মাশরুম
- মিল্কি বা দুধ মাশরুম
- ওয়েস্টার বা ঝিনুক মাশরুম
বোতাম মাশরুম
চাষ পদ্ধতিঃ-
এটি চাষের সময় চারটি বিষয়ের ওপর লক্ষ্য রাখতে হবে! জীবাণুমুক্ত
কম্পোস্ট,উন্নত গুণসম্পন্ন মাশরুমের বীজ, আবহাওয়া
(তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও বায়ু চলাচল ইত্যাদি) ও মাশরুম খামারের পরিবেশ।
কম্পোস্ট তৈরির জন্য পানিতে ফোটানো জীবাণুমুক্ত ধান বা গমের কাটা খড়
পরিমাণ অনুযায়ী আগের দিন জলে ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। পরের দিন এই খড়ের সাথে
গমের ভুসি, ইউরিয়া, জিপসাম ভালোভাবে মিশিয়ে ঢিপি বা স্তুপ করে তার উপর
প্লাস্টিকের চাদর দিয়ে ঠেকে দিতে হবে ৬,১০,১২,১৬,২০,২২, ২৪ দিনের মাথায়
উলটপালট করে আবার ঢেকে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
কম্পোস্ট তৈরি হয়ে গেলে দেড় ফুট বা দুই ফুট পলিথিন প্যাকেটের মধ্যে ২/৩ অংশ
কম্পোস্ট ভরে তার ওপর মাশরুমের বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে।প্যাকেটের উপর খবরের কাগজ
দিয়ে মুখ ঢেকে দিতে হবে। ১৮ থেকে ২০ দিন পর খবরের কাগজ তুলে দিয়ে তার ওপর
লেয়ার দিতে হবে,যেখানে ৩ ভাগ বালি ও এক ভাগ মাটির মিশ্রণ বা কোকোপিট ও কেঁচো
সার ১ ইঞ্চি পুরো করে পলিথিনের উপর ভরে দিতে হবে।
কুড়ি বা মুকুল বেরোতে শুরু করলে প্রতিদিন পানি স্প্রে করতে হবে। কুড়ি বড় হলে
তুলে নিতে হবে। দেখা গেছে ১০০ কেজি কম্পোস্ট থেকে ১৪/১৬ কেজি বোতাম
মাশরুম পাওয়া যায়।
সুস্বাদু পোয়াল মাশরুম
সাধারণত বর্ষাকালে এ মাশরুম সুন্দর ভাবে চাষ করা যায় এবং ফলনও বেশি পাওয়া
যায়।খড়ের গাদায় এটি জন্মায় বলে এটিকে পোয়াল মাশরুম বলে।এটি অন্যান্য
মাশরুমের থেকে স্বাদে বেশি সুস্বাদু এবং মাংসল। ধান বা গমের ঘর পাতলা পলিথিনের
চাদর ডালের গুড়া ও বাস এবং কাঠের মাচা প্রয়োজন হয় এটি চাষে। এটির চাষ পদ্ধতি
সহজ।
চাষ পদ্ধতিঃ-
খামার তৈরীর জন্য একটি ছায়াযুক্ত স্থান নির্বাচন করতে হবে।বাঁশ বা কাঠের তৈরি
সঠিক মাপ অনুযায়ী দৈর্ঘ্য-প্রস্থ এবং উচ্চতার সমন্বয়ে মাচা তৈরি করে নিতে
হবে।
যদি আমরা ১০ কেজি খড় ব্যবহার করতে চাই, তাহলে সে অনুযায়ী খড় পরিষ্কার করে
ফুটিয়ে জীবন মুক্ত করে,আগা কেটে সমান করে ১২ থেকে ১৪ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে
হবে এবং তারপরে বাড়তি জল ঝরিয়ে নিতে হবে। খড়ের বান্ডিল গুলো তিনটি স্তরে
সাজাতে হবে।
প্রায় ২০০গ্রাম স্পন ৪ ভাগে ভাগ করে, চারধার থেকে তিন ইঞ্চি ছেড়ে দিয়ে খড়ের
বান্ডিলের দুই ধারে বীজ ছড়িয়ে দিতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
একইভাবে দ্বিতীয় স্তরও সাজাতে হবে। মনে করে অবশ্যই বীজ দেওয়ার আগে
ডালের গুঁড়ো চারদিকে ছড়িয়ে দিতে হবে। শেষের স্তরে বীজ দেওয়ার কোন প্রয়োজন
নেই।১০ থেকে ১২ দিন পরে মাশরুমের কুড়ি বের হতে শুরু করবে সব কিছু ঠিকঠাক
থাকলে।
তখন পলিথিন খুলে রাখতে হবে। দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই মাশরুমগুলো তোলার
উপযুক্ত হবে এবং কুঁড়িগুলো পুরোপুরি খোলার আগেই তুলে নিতে হবে।খেয়াল রাখতে হবে
স্তুপ এর নিচে যেন কোন ভাবে পানি না জমে।
এভাবে একটি বেডে ১৪ থেকে ১৫ দিনের মাথায় সর্বাধিক ফলন পাওয়া যায় এবং এর পরের
সপ্তাহে অল্প পরিমাণ মাশরুম জন্মায়। এক মাসের বেশি বেডগুলো না রেখে সার তৈরি
জন্য প্রক্রিয়া করে নিয়ে, পুনরায় নতুন চাষযোগ্য বেড তৈরি করলে মাশরুম ফলনের
ধারা অব্যাহত থাকে।
মিল্কি বা দুধ মাশরুম
সাদা দুধের মতো রঙের কারণে এ মাশরুম মিল্কি মাশরুম নামে পরিচিত। খেতেও বেশ
মজাদার কিন্তু অন্য মাশরুম গুলোর থেকে স্বাদ কিছুটা আলাদা।
কিভাবে ঘরে বসে মাশরুম চাষ করতে হয় |
চাষ পদ্ধতিঃ-
খড় জীবাণুমুক্ত করার জন্য ভালো করে পানিতে ফুটিয়ে নিতে হবে নির্দিষ্ট
সময় পর্যন্ত। একসঙ্গে কেটে পানির সাথে মিশিয়ে বেশি পানিটুকু ঝরিয়ে
নিতে হবে এবং পরের দিন চাষের কাজগুলো শুরু করতে হবে।
ছোট ছোট টুকরো করে কাটা নারিকেলের ছোবড়া অথবা নারিকেলের কোকোপিট খড়ের
সাথে মিশিয়ে নিলে ফলন বেশি পাওয়া যায়। খড়, কাঠের গুড়া, নারকেলের
ছোবড়া অথবা কোকোপিট একসাথে মিশিয়ে পানি দিয়ে মাখামাখা করে ভেজাতে
হবে। বেশি ভেজালে কাঠের গুড়ো গুলো পানিতে ভাসতে শুরু করবে তাই পরিমাণ মতো পানি
ব্যবহার করতে হবে। এভাবে ৮ থেকে ১২ ঘন্টা ভেজাতে ও ফুটাতে হবে
বিশুদ্ধকরণ করার জন্য।
মিশ্রনটি পাত্রের মধ্যে যেমন ভাবে ফুটানো হয়েছে সে এবংসময় নিয়ে ঠান্ডা
হবে। ঠান্ডা হওয়ার পর মিশ্রণটি থেকে বাড়তি পানি ঝরিয়ে নিতে হবেমাশরুমের
স্পন এর প্যাকেট খুলে তিন ভাগে ভাগ করে পানি দিয়ে নেওয়া মিশ্রণ কেউ
তিনভাগে ভাগ করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ
আমরা যদি ১০০ গ্রাম বী নিই তাহলে সেটি চারটি ভাগে ভাগ করে নিতে হবে এবং
প্লাস্টিকের ভেতরের তলা বেঁধে ব্যগটিকে উল্টো করে নিয়ে গোলাকার করে নিচের পুরো মিশ্রণ দিতে হবে। তার ওপর একভাগ
বিষ ছিঁড়ে দিতে হবে। চারটি স্তর করতে হবে এবং উপরের স্তরে বীজ দিয়ে এক
ইঞ্চি পুরো মিশ্রণ দিয়ে চাপা দিতে হবে। এভাবে তৈরি মিশ্রণের উপরিভাগে গোল করে কাটা খবরের কাগজ গুলো অতিরিক্ত পানি
শুষে নিবে দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
মিশ্রণগুলো পলিথিনে এমন ভাবে পড়তে হবে যে সেগুলো দেখতে যেন সিলিন্ডারের মত
দেখায় 15 থেকে 20 দিন পর থেকে ফানি স্প্রে করতে হবে কাগজ অথবা ওপরে তুলোটা
হালকা ভিজিয়ে দিতে হবে ১৫ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে মিশ্রণটির চারদিকে সাদা সাদা
সাদা প্রলেপ পড়বে এবং নিয়মিত পানি স্প্রে করতে হবে পলিথিনের নিচে যদি পানি
জমে যায় তাহলে মোটা সুঁচ দিয়ে অতিরিক্ত পানি বের করে দিতে হবে ৭ থেকে ১০
দিনের ভেতর দিতে পারে এবং এরপর থেকেই শুরু হবে মোটামুটি হিসেবে কুড়ি থেকে
পরিপূর্ণ হতে সময় লাগে ৭ দিন এই মাশরুম দুই থেকে তিন ইঞ্চি লম্বা ছাতার মত
দেখায়।
ওয়েস্টার বা ঝিনুক মাশরুম
ঝিনুক মাশরুমের চাষ তুলনামূলকভাবে সহজ। অতিরিক্ত গরমের আবহাওয়া বাদ দিলে
প্রায় সারা বছরে এ মাশরুম চাষ করা যায় এবং ফলন ও প্রায় সব ঋতুতে একই রকম
পাওয়া যায়।
চাষ পদ্ধতিঃ-
ছায়া যুক্ত স্থান নির্বাচন করার পর পলিথিনের ব্যাগে গমের বা ধানের খড় (অবশ্যই
জীবাণুমুক্ত মুক্ত ও বিশুদ্ধ) নিতে হবে এবং উন্নত মানের বীজ সহ মাশরুম চাষের
মৌলিক বিষয়াদি ঠিকঠাক করে নিতে হবে। দুই থেকে তিন সেমি আকারে ধান বা গমের খড়
পানিতে মিশিয়ে ফুটিয়া জীবনমুক্ত করে নিতে হবে,এক্ষেত্রে বেবিস্টিনে ভেজানো
যেতে পারে এতে খড় জীবানুমুক্ত হবে,এছাড়া চুন বা ব্লিচিং পাউডার দিয়েও খর
জীবনমুক্ত করে নেওয়া যায়।
অতিরিক্ত পানি ফেলে দিতে হবে,যদি ভেজা খড় ঝুড়িতে রেখে দেওয়া হয়, তাহলে
অতিরিক্ত পানি ঝরে যায় সহজেই এবং ক্লোরিনের গন্ধ ও চলে যায়। পলিথিনের ব্যাগে
চার থেকে ছয় ইঞ্চি পুরো করে খড় দিতে হবে এবং তার ওপর প্রয়োজনমতো মাশরুম স্পোর
ছড়িয়ে দিতে হবে। একই ভাবে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্তর সাজিয়ে শেষ স্তরে ১
ইঞ্চি পুরো করে দিতে হবে। পানি যেন জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে এবং
নিচে কয়েকটি করে ফুটো রাখতে হবে।
এই অবস্থায় ১৬ থেকে ১৮ দিন সময় রাখতে হবে।পলিথিন ব্যাগের ভেতর দিনে ২/৩ বার
পানি স্প্রে করে দিতে হবে এবং কিছু দিনের মধ্যেই তোলা আরম্ভ করা যেতে পারে
নিয়মিত পানি স্প্রে করলে ফলন ভালো হয় এবং অধিক হয়।
বিষাক্ত মাশরুম চেনার উপায়
খালি চোখে বিষাক্ত মাশরুম চেনা না গেলেও পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা যায় যে
কোনটি বিষাক্ত এবং কোনটি খাদ্য যোগ্য।সাধারণ একটি পরীক্ষা হিসেবে গরম পানিতে
ফুটানো পরীক্ষাটি করা বেশ সহজ একটি পদ্ধতি-
আরো পড়ুনঃ
কোন মাশরুম গরম পানিতে রেখে কিছুক্ষণ পর একটি রান্নার চামচ দিয়ে পানিতে ডুবালে
চামচে কালো আস্তর পড়ে এবং পড়লে সেটি বিষাক্ত কিন্তু অপরপক্ষে যেটি খাদ্য যোগ্য
হয় সেটির জন্য এমন কোন আস্তরণ পড়বে না।
এছাড়াও যে সকল মাশরুম রং উজ্জ্বল,রঙিন,তিক্ত বা কটু স্বাদ যুক্ত এবং
দুর্গন্ধযুক্ত সেগুলো বিষাক্ত হয়। আমাদের দেশের পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষেরা
ক্ষুধার্ত মুরগি দিয়ে মাশরুম পরিক্ষা করে শনাক্ত করে থাকে তাদের আঞ্চলিক
পদ্ধতি হিসেবে।
বিষাক্ত মাশরুম খেলে গা ব্যথা, বমি বমি ভাব,পাতলা পায়খানা, মাথা ব্যথা
/ঘোরানো, ঘাম ঝরা ইত্যাদি বিভিন্ন রোগ লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
ঘরে বসে মাশরুমের বীজ উৎপাদন পদ্ধতি
- যেকোনো কৃষিজ ফল-ফসলের জন্য বীজ একটি অত্যাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।মাশরুম চাষেও যার ব্যতিক্রম নেই।বীজ বা স্পন এর উপরই নির্ভর করে নতুন মাশরুম কেমন হবে।
- মাশরুম স্পন বা বীজ সরকারি প্রতিষ্ঠান কিংবা সরকারি উদ্যোগে গঠিত খামার থেকে সংগ্রহ করা অথবা নির্ভরযোগ্য কোনো দোকান বা নার্সারি থেকেও সংগ্রহ করা যেতে পারে।
- পরীক্ষাগারে বা ল্যাবরেটরিতে পছন্দমত সঠিক ছত্রাকের প্রজাতির বীজ তৈরি করে কৃষকদের সরবরাহ করা হলে ভালো ফলন বা উৎপাদন করা সম্ভব। একটি উন্নত প্রজাতির সাথে অন্য কোন প্রজাতি মাশরুম বীজ যদি মিশে যায় তাহলে ফলন অনেকাংশেই কমে যায়।
- যেকোন মাশরুমের বীজ বা স্পন, উচ্চচাপ সম্পন্ন বাষ্প পরিশোধিত ধান,গম, জোয়ার, বাজরা ইত্যাদি শস্যদানা দিয়েই তৈরি করা হয়।
- বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মাশরুম তিনটি ধাপের মাধ্যমে কালচার করে স্পন তৈরি করা হয়--
- বিশুদ্ধ মাশরুম কালচার পৃথকীকরণ
- ভান্ডার কালচার প্রস্তুত করণ
- মাশরুম স্পন বা বীজ উৎপাদন
মাশরুমে পোকামাকড় ও রোগ দমন পদ্ধতি
তাপমাত্রা, বায়ুর আর্দ্রতা,পানির সাম্যতা ইত্যাদির ওপর নির্ভর করে মাশরুম চাষে
কি কি ধরনের পোকামাকড় বা রোগ আক্রমণ হতে পারে। 'অতিরিক্ত আদ্রতা' যুক্ত মাশরুম
বেড বা বিছানা নানা সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তা মহামারী আকারে ছড়িয়ে
পড়তে পারে।
আরো পড়ুনঃ
বিভিন্ন ধরনের মোল্ড /ব্যাকটেরিয়া/ভাইরাস এর আক্রমণে মাশরুমের
জন্য প্রস্তুতকৃত খড়, কম্পোস্টে, বেডে নানা রকম রোগ দেখা দিতে পারে। মাশরুমের
যে রোগগুলো হয় সেগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং সম্পূর্ণ খামারটি নষ্ট করে
দিতে পারে।
তাপ মাত্রা ঠিক না থাকলে ও অন্য ছত্রাক কিংবা ভাইরাসগুলো বেশি সুযোগ
সুবিধা গ্রহন করে এবং কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাশরুমের স্পন গুলো নষ্ট করে
দেয়। এতে ফলন একেবারেই কমে যায় বা হয় ই না।দমনের জন্য আক্রান্ত স্থানে সঠিক
পরিমাণে ফরমালিন বা অন্যান্য ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে। ব্যাগ ও ট্রেতে
রোগাক্রান্ত চিহ্ন দেখলেই তা সরিয়ে নেওয়া খুবই প্রয়োজনীয় একটি কাজ বলে
বিবেচিত।
মাশরুম রন্ধন প্রণালী
এমন অনেকেই আছেন, যারা খালি মুখে মাশরুম কাঁচা খেতে পারে, অনেকে পছন্দও করেন,
যেটিতে ক্ষতির তেমন কোন কারণ নেই বলেই ধারণা।
বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি,মাছ-মাংস কিংবা পনিরের মাশরুম রান্না করা করলে আলাদা
স্বাদ পাওয়া যায়। এছাড়া মাশরুম পাকোড়া, কালিয়া চিলি-মাশরুম,
মাশরুম-ফ্রাই, মটরশুটি-মসলা মাশরুম, মাশরুম পরোটা ইত্যাদি নানা রকম রান্না করা
যায় মাশরুম দিয়ে যেগুলো খেতে একই সাথে পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু।
শেষ কথা
মাশরুম এমন একটি ছত্রাক যেটিতে মানুষের জন্য নানা ধরনের অন্য পুষ্টি উপাদান
রয়েছে এবং অবশ্যই এটি ঔষধি গুণ সম্পন্ন। বাহিরের দেশগুলোতে স্বাস্থ্যকর খাদ্য
তালিকায় অনন্য উচ্চতায় স্থান পেয়েছে। আমাদের ও উচিত দৈনিক খাদ্য তালিকায়
মাশরুমকে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা।
আশা করি, তথ্যবহুল আজকের পোস্ট টি আপনাদের প্রয়োজনে আসবে এবং কৃষি সম্পর্কে
জ্ঞান বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে। উল্লেখিত তথ্যগুলো আপনাদের মাশরুম চাষে
উদ্বুদ্ধ করবে। এবং মাশরুম নিয়ে জানার আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তুলবে,বলে আমার
ধারণা।
স্ক্রোলিং ষ্টেশন ২৪-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url