গর্ভাবস্থায় যে ৭ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে

গর্ভাবস্থায় যে ৭ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে ? আজ আমরা সেসব খাবার নিয়ে আলোচনা করব। গর্ভকালীন অবস্থায় মাদের দরকার বিশেষ সচেতনতা। একটি মা তার শরীরের যত যত্ন করবে, তার বাচ্চা সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আজকে আমরা গর্ভাবস্থায় যে সাত ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে এবং কোন খাবারগুলো ভুলেও খাওয়া যাবেনা তা নিয়ে মূলত আজকের আলোচনা। আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য খুবই উপকারী হবে। শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।

নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান 

ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবার 

গর্ভাবস্থায় যে ৭ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে তার মধ্যে একটি হচ্ছে ফলিক এসিড। পড়ে গেছি এর অন্য নাম ভিটামিন b9। বিভিন্ন খাবারে এটি 'ফোলেট' হিসেবে থাকে। সবুজ শাকসহ বিভিন্ন ফল ও বাদামে এই ভিটামিন বি নাইন পাওয়া যায়। যখন কৃত্রিমভাবে ভিটামিন বি নাইন তৈরি করা হয় তখন তাকে ফলিক এসিড বলে। ফলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট বা বড়ি হিসেবে ফার্মেসিতে পাওয়া যায়।

গর্ভাবস্থায় নানান ধরনের পুষ্টিকর খাবার খাওয়া দরকার। গর্ভবতী মায়ের সকালের খাবারের সাথে ফলিক এসিড সমৃদ্ধ কিছু খাদ্য রাখা খুবই জরুরী। এটি যেমন হাড়ের দৃঢ়তা বাড়ায় তেমনি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও বৃদ্ধি করে। মা ও শিশুর জন্য ফলিক এসিড গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গর্ভবতী মা দের এসব খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া উচিত।
গর্ভাবস্থায় ফলিক এসিড খাওয়ার নিয়ম হলো আপনার প্রতিদিন ৬০০ মাইক্রোগ্রাম বা ০.৬০ মিলিগ্রাম ফলিক অ্যাসিড প্রয়োজন। কিন্তু পুরোটা খাবার থেকে পাওয়া খুব কঠিন। তাই পড়ে কিছু সময় তো খাবার খাওয়ার পাশাপাশি প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০০ মাইক্রগ্রাম বা ০.৪০ মিলিগ্রাম ফলিক এসিড ট্যাবলেট খেতে পারেন। সন্তান হওয়ার পরিকল্পনা করার সময় থেকে ফলিক এসিড খাওয়া শুরু করবেন।

আয়রন যুক্ত খাবার 

একটি মায়ের গর্ভাবস্থায় যে ৭ ধরনের খাবার বেশি খাওয়া উচিত তার মধ্যে আয়রনযুক্ত খাবার হচ্ছে অন্যতম। কেননা শরীরের হিমোগ্লোবিন উৎপাদনের জন্য আয়রন অত্যাবশকীয় একটি উপাদান। হিমোগ্লোবিন এক ধরনের প্রোটিন বা লাল রক্ত কণিকার মধ্যে থাকে এবং শরীরের বিভিন্ন অংশের অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। হিমোগ্লোবিনের মতই আরেকটি উপাদান হলো মায়োগ্রবিন যা মাংসপেশিতে থাকে। 

একজন গর্ভবতী মা যখন নিজের শিশুকে খাদ্যের বা পুষ্টির যোগান দিতে গিয়ে নিজে দুর্বল হয়ে পড়েন। তখন তার শারীরিক শক্তি এবং শিশুটির পূর্ণাঙ্গ শরীর তৈরিতে যতসব উপাদান রয়েছে তার অধিকাংশই যোগান দেয় হিমোগ্লোবিন ও মায়োগ্লোবিন। আর এই হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় আয়রন (Fe²+) দিয়ে। গর্ভবতী মায়ের শেষ তিন মাসে প্রচুর পরিমাণে আয়রনযুক্ত খাবার খেতে হবে। এছাড়াও গর্ভাবস্থার শুরু থেকেই এ জাতীয় খাবার নিয়মিত খাওয়া দরকার।

ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার 

গর্ভাবস্থায় যে ৭ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে তার মধ্যে আরেকটি হলো ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার। গর্ভকালীন মাদের অবশ্যই এ খাবার নিয়মিত খাওয়া উচিত। কেননা ক্যালসিয়াম এর অভাবে ঘাড়ে ব্যথা, ক্রাম্প সহ খিচুনি হতে পারে। হাটাহাটি বা নড়াচাড়া করার সময় উরু হাতের বাহু ছাড়াও পায়ে বা হাঁটুতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। তাই গর্ভবতীর মধ্যে ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার প্রতিদিন খাবারের তালিকায় রাখা আবশ্যক। 
আপনার হাড় ও দাঁত কে শক্ত করতে ক্যালসিয়াম জাতীয় খাবার দরকার। এছাড়াও আপনার পেশির কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে এবং রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। প্রতিদিন আপনার খাবারের তালিকায় দুগ্ধজাত খাবার(দুধ, দই, পনির), সবুজ শাক-সবজি (ব্রকলি), বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার রাখা উচিত। এতে গর্ভবতী মা ও শিশু উভয়ই উপকৃত হবেন।

 জিংক সমৃদ্ধ খাবার

জিংক সমৃদ্ধ খাবার মা ও শিশুর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি খাবার। একটি গর্ভবতী মায়ের জিংকের যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। কেননা যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। দেহে প্রোটিন উৎপাদনে সহায়তা করে। ফলে প্রত্যেকটি এনজাইম এবং হরমোন তৈরি হয়, যা অন্যান্য কার্য সম্পাদনে সহায়তা করে। আবার অন্যদিকে দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেও যথেষ্ট ভূমিকা পালন করেন। জিংক এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হল এরা ডিএনএ (DNA) তৈরিতে সহায়তা করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে প্রতিদিন নারীদের ৮ থেকে ১০ মিলিগ্রাম এবং পুরুষদের ৯ থেকে ১১ গ্রাম জিংক জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। গর্ভাবস্থায় ওই যে ৭ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে তার মধ্যে জিংক সমৃদ্ধ খাবার একটি। এতে অভ্যন্তরীণ বা  বাহ্যিক বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। গর্ভবতী মাকে নিয়মিত এই খাবারের যোগান তার শরীরে দেওয়া উচিত। যেন মা ও শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করা যায়।

আঁশ জাতীয় খাবার 

আঁশ জাতীয় খাবার একটি দেহের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কেননা এর মধ্যে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যেসব শরীরে কোলেস্টেরল মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আবার অভ্যন্তরীণ অঙ্গের নড়াচড়াতেও সহযোগিতা করে আর জাতীয় খাবার। আবার অন্যদিকে শরীরের ওজন কমাতে আর জাতীয় খাবারের বিকল্প কিছু নেই। 

গর্ভকালীন শিশুর সুস্থতা নিশ্চিত করতে প্রতিদিন আঁশ জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। গর্ভবতী মাদের আঁশ জাতীয় খাবার খেয়ে যতটা উপকার হবে তার চেয়ে বেশি উপকার হবে শিশুর। গর্ভাবস্থায় যে ৭ রকমের খাবার বেশি খেতে হবে তার মধ্যে আঁশ জাতীয় খাবার অন্যতম। গর্ভাবস্থায় থাকা ভালো প্রথম এবং শেষ তিন মাস এজাতীয় খাবার আপনাদের খাবারের তালিকায় রাখতে পারলে খুবই উপকার হবে আপনাদের।

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার 

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বা আমিষ জাতীয় খাবার দুটোই একই কথা। আমাদের শরীরের প্রায় ৭০ ভাগ পানি। আর অধিকাংশই প্রোটিন আর লিপিডে ভরা। আমাদের শক্তির উৎস প্রোটিন এবং শরীরের সকল কার্যকলাপ সংঘটিত হতে প্রোটিনের বিকল্প কিছু নেই। তাই একটি গর্ভবতী মায়ের প্রধান খাদ্য হচ্ছে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার। গর্ভাবস্থায় যে ৭ ধরনের খাবার বেশি খেতে হবে তার মধ্যে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার হচ্ছে প্রধান খাদ্য। 
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে মাছ, মাংস, ডাল, ডিম, দুধ ইত্যাদি। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার আপনার শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যার ফলে আপনি নড়াচড়া সহ অন্যান্য কাজ সম্পন্ন করতে পারবেন। গর্ভবতী মাকে অবশ্যই প্রোটিন জাতীয় খাবার প্রতিদিনের খাবার তালিকায় রাখা উচিত। মায়ের খাবার উপরে কিন্তু শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য নির্ভর করে। তাই গর্ভবতী থাকাকালীন একটি মাকে খাওয়ার বিষয় যথেষ্ট সচেতন হওয়া দরকার।

ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি এসিড  

ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড যুক্ত খাবার গুলো খুবই উপকারী বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করে। কেননা এতে আপনার শরীরের বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা থাকে। যেমন: ক্যান্সার, হৃদরোগ সহ আর্থ্রাইটিস জাতীয় দীর্ঘস্থায়ী অসুখের ঝুঁকি কমাতে পারে। শুধু যে রোগের ঝুঁকি কমায় এমন নয় ওমেগা থ্রি‌ ফ্যাটি অ্যাসিড জাতীয় খাদ্য শরীরের গ্লুকোজের মাত্রা, রক্তচাপ, স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ সহ বিভিন্ন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করেন। 

একটি গর্ভবতী মা কে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড জাতীয় খাবার গুলো নিয়মিত খাওয়া দরকার। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড জাতীয় খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে উদ্ভিজ্জ তেল যেমন বাদাম, আখরোট, খাবার যোগ্য বীজ, তিসি বীজ সহ মাছের তেল খেতে হবে। যদিও সেটি পরিমাণ মতো এবং এ বিষয়ে ভালো জ্ঞান না থেকে থাকলে ফ্যাট জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া যাবে না। পরবর্তীতে কোলেস্টেরল বেড়ে যেতে পারে।

গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন কোন খাবার গুলো খাবেন না

এতক্ষণ ধরে আপনারা পড়ে আসলেন যে গর্ভাবস্থায় যে ৭ ধরনের খাবার বেশি করে খাওয়া উচিত। আর এখন আমরা আলোচনা করতে যাচ্ছি একটি গর্ভবতী মাকে কি কি জিনিস মেনে চলতে হবে বা গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন কোন খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা। কারণ মায়ের খাদ্যাভাসের উপর নির্ভর করে শিশুর ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য কেমন হবে। তাই একটি গর্ভবতী মাকে সব সময় ভালো টি বেছে নিতে হবে তার শিশুর ভবিষ্যতের জন্য।
  • কাঁচা খাবারঃ কাঁচা খাবার গুলোর মধ্যে রয়েছে দুধ, রান্না না করা মাছ-মাংস,‌ শাক-সবজি ইত্যাদি।
  • মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবারঃ মেয়াদোত্তীর্ণ খাবার গুলোর মধ্যে অনেক ব্যাকটেরিয়া থাকে। যার ফলে মা অসুস্থ হতে পারে তাই মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার উপেক্ষা করে চলাই ভালো।
  • কেমিক্যাল যুক্ত খাবারঃ কেমিক্যালযুক্ত খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে ফল ও বাজারজাতকৃত সবজি। যা কিডনি ও যকৃত‌ কে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
  • ফাস্টফুডঃ ফাস্টফুড জাতীয় খাবার গুলোর মধ্যে বার্গার, পিজা সহ অন্যান্য অধিক চর্বি জাতীয় খাবার না খাওয়া উত্তম। কেননা এগুলো ব্লাড প্রেসার বৃদ্ধি সহ হৃদরোগের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

শেষ কথা

একটি গর্ভবতী মায়ের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো তার শিশু। প্রত্যেকটি মা চায় তার শিশুকে সঠিক বিকাশ-বুদ্ধি এবং সুস্থ স্বাস্থ্য। তাই শিশুর বিকাশ তার জন্মের আগে থেকেই শুরু করতে হবে। যেন দুনিয়ার বুকে এসে পাকাপোক্ত হতে পারে। তাই মাকে বেশি বেশি খেতে হবে যেন তার শিশু সুস্থ থাকে। গর্ভকালীন অবস্থায় মাদের খাবার তালিকায় যে সকল খাবার রাখতে হবে তা নিয়ে ছিল আজকে আলোচনা।

গর্ভকালীন মা যতগুলো দিন পার করবেন তার প্রতিদিন খাবারের তালিকায় উপরোক্ত খাবারগুলোর যোগান দেওয়ার চেষ্টা করবেন এবং নিজের দেওয়া খাবারগুলো উপেক্ষা করে চলার চেষ্টা করবেন। এতে মা ও শিশু উভয়ই সুস্থ থাকবেন। কারণ আমরা সকলেই জানি মায়ের শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে শিশুর বিকাশ ঘটতে থাকে। তাই সঠিক সময়ে সঠিক উপাদানের অভাব পূরণ করতে পারলেই আপনার শিশু সুস্থ হয়ে জন্মাবে।

আবার শুধুই যে শিশু উপকৃত হবে এমন নয়। গর্ভাবস্থায় মায়ের যেসব শারীরিক জড়তা বা অসুস্থতা লক্ষ্য করা যায়। তার অধিকাংশই উপরোক্ত কোন না কোন খাবারের অভাবেই ঘটে থাকে। যদি সে সব খাবারগুলো সঠিক সময়ে গ্রহণ করা যায় তবেই মায়ের অসুস্থতা দূর হবে। শারীরিক ভার সামাল দেওয়া সহজ হবে। নিজের খাবার প্রতি রুচি বৃদ্ধি হবে‌ এবং শেষ মাসে গিয়ে ব্যথা বা প্রদাহ সহ্য করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্ক্রোলিং ষ্টেশন ২৪-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url