ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো 2024

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো বা ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে প্রথমে কি করতে হবে? এমন প্রশ্ন অনেকের মনেই জেগে থাকে। তার জন্য আপনাকে সর্বপ্রথম যেসব কাজ করা দরকার তা আমরা আজকে তুলে ধরব।
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখব 2024
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে সর্বপ্রথম দরকার কোন একটা বিষয়ের উপর দক্ষতা এবং ধৈর্য। ফ্রিল্যান্সিং বিষয়ে নতুনদের জন্য যা যা জানা দরকার তার সবই এই পোস্টে শেয়ার করেছি। আশা করি আজকের পোস্টটা আপনাদের জন্য অনেক উপকারী হবে।

নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চানঃ

ফ্রিল্যান্সিং কি 

ফ্রিল্যান্সিং (Freelancing) এমন একটি পেশা যেখানে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন। এটি সাধারণত চাকরির মতোই, কিন্তু ভিন্নতা হলো এখানে আপনি আপনার স্বাধীন মত কাজ করতে পারবেন। আপনার সময়সীমা থাকবে না, কোন চাপ থাকবে না, একটা নির্দিষ্ট সময় দিবে যেটা আপনার কাছে যথেষ্ট সময় হবে। 

দেখা গেল আপনার এখন কাজ করতে ইচ্ছা করছে না, আপনি করবেন না। যখন ইচ্ছা করবে তখন আবার চাইলেই করতে পারবেন। এক কথায় এই কাজে ধরাবাধা কোন অফিস টাইম নেই। আবার এখানে আপনার নির্দিষ্ট কোন এমপ্লয়ার(Employer) নেই, যখন যে বাইরের কাজ দিবেন তখন সেই আপনার ইমপ্লয়ার।‌ তাই সবাই এখন ফ্রিল্যান্সিং করার উদ্যোগ নিচ্ছেন। 

সাধারণত চাকরি থেকে এখানে আরেকটি বিষয়ের ভিন্নতা আছে। সেটি হল কাজের স্থান। ফ ফ্রিল্যান্সিং এর নির্দিষ্ট কোন অফিস নেই। মূলত আপনার বাড়ি হচ্ছে আপনার অফিস। এছাড়া ল্যাপটপ বা মোবাইল দিয়ে করা যাবে এমন কাজ হলে তো কোন কথাই নেই। যেখানে খুশি সেখানে থেকেই আপনি কাজ করতে পারবেন এবং যথারীতি ভাবে নিজের বেতন দেওয়া হাতে নিতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং-এর ক্ষেত্রে খুব সহজেই সরকারি বেসরকারি অনেক চাকরির থেকে বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন আপনার যদি যথেষ্ট পরিমাণে দক্ষতা থাকে। আমরা সবাই জানি যে, আমাদের দেশে সেভাবে দক্ষতার কদর করা হয় না, কিন্তু বাইরের দেশগুলোতে হয়। আপনি সে সব দেশের বারদের সাথে কাজ করে বাংলাদেশের তুলনায় দ্বিগুণ/তিনগুণ অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।

নতুনরা কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করবো 

এটা সকলেরই প্রশ্ন যে কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করব? এর উত্তরে আমি বলি, এই পেশায় ঢোকার জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে হবে। এক্ষেত্রে আপনার যে কাজের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি সে কাজটি বেছে নিবেন। এর ফলে আপনি কাজ করে যেমন মজা পাবেন, তেমনি অনেক দূর যেতে পারবেন। যেমন: গ্রাফিক্স ডিজাইন সেকশনটা বেছে নিলেন ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য। 
তো এটি বেছে নেওয়ার পূর্বেই আপনি দেখবেন যে, এ কাজটি আপনি কেমন পারছেন, কেমন আগ্রহ আপনার এই গ্রাফিক্স ডিজাইনের ওপর। যদি দেখেন সব কিছু ঠিকঠাক, সে ক্ষেত্রে এটিকে নির্ধারিত করে এই রিলেটেড যত কাজ আছে সব শিখবেন। যেমন:-ব্যানার বানানো, কভার পেজ, লিফলেট, পোস্টার, লোগো, টি-শার্ট ডিজাইন, থামনেইল ডিজাইন ইত্যাদি।

তো কাজ শেখার পরে এবার কাজ করার পালা। কাজ করার জন্য আপনাকে প্রথমে একটি ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে একাউন্ট খুলতে হবে। এরকম অনেক প্ল্যাটফর্ম রয়েছে বর্তমানে। যেমন:-Fiverr,Freelancer,Upwork ইত্যাদি। অ্যাকাউন্ট খোলার পর সেটিকে সুন্দর করে সাজাতে হবে। দোকান যেমন বিভিন্ন পণ্যে সাজানো থাকে, ঠিক তেমনভাবেই আপনার করা কাজগুলো পোর্টফোলিও আকারে সাজিয়ে রাখতে হবে বিভিন্ন মার্কেটপ্লেস গুলোতে। 
ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখব 2024
এরপরে শুধু প্রথম কাজের জন্য অপেক্ষা করাই আপনার কাজ। আসলে প্রত্যেকটা কাজের ক্ষেত্রেই প্রথম ধাপ টা একটু কষ্টকর হয়ে থাকে। ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রেও বিষয়টি ভিন্ন নয়। প্রথম কাজটা পাওয়ার জন্য একটু কষ্ট করে অপেক্ষা করতে হবে। তবে কারো রেফারেন্সের মাধ্যমে কাজ পাওয়া অনেক সহজ এখানে। সে ক্ষেত্রে আপনি পরিচিত কোন ফ্রিল্যান্সারের সাহায্য নিতে পারেন অথবা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নিতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কেমন ডিভাইস প্রয়োজন 

ফ্রিল্যান্সিং শেখার ক্ষেত্রে ডিভাইস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই ডিভাইস বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজ অনুযায়ী ডিভাইসের ও ভিন্নতা রয়েছে, যেমন অফিস ওয়ার্ক বা ডাটা এন্ট্রির ক্ষেত্রে সাধারণত কনফিগারেশন কম্পিউটারই যথেষ্ট। আবার আপনি যদি ছোটখাটো ডিজাইন যেমন বিজনেস কার্ড, লোগো বা ব্যানার তৈরীর ক্ষেত্রে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মধ্যে যে কোন স্মার্টফোনে করা সম্ভব। 

এখন আপনি যদি হাই কনফিগারেশনের কাজ করতে চান। সেক্ষেত্রে আপনাকে স্মার্ট ফোন অবশ্যই তালিকায় নেওয়া যাবে না। হাই কনফিগারেশন যুক্ত ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার অবশ্যই দরকার। কেননা এগুলোর কাজ করতে অনেক ভারী ভারী সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয়।  আপনার সময়কে লাঘব করতে অবশ্যই হাই কনফিগারেশন এর একটি কম্পিউটার দরকার। আসুন কাজ অনুযায়ী কিছু কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপের কনফিগারেশন গুলা এক নজরে দেখে নিই।

  • Core i3/AMD Rayzen 3 প্রসেসর, 4GB RAM, 128GB SSD-তে যেসব কাজ হবে:-অফিস ওয়ার্ক, ডাটা এন্ট্রি, ডিজিটাল মার্কেটিং, কন্টেন্ট রাইটিং ইত্যাদি 
  • Core i3-i5/AMD Rayzen 3-5 প্রসেসর, 4-8GB RAM, 128GB বা তার অধিক SSD-তে যেসব কাজ করা যাবে:-ওয়েব ডিজাইনিং এন্ড ডেভেলপিং, প্রোগ্রামিং, সাইবার সিকিউরিটি এবং নেটওয়ার্কিং।
  • Core i5-i7 বা AMD Rayzen 5-7 প্রসেসর, 8-12GB RAM, 2GB GPU, 256GB SSD, 500 হার্ডডিস্ক-তে যেসব কাজ হবে:-গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং (মোশন গ্রাফিক্স, 2D ও 3D animation ইত্যাদি)

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে কি কি দক্ষতা থাকা দরকার 

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে প্রাথমিক দক্ষতা গুলোর মধ্যে প্রথমত হল আপনার কম্পিউটার অথবা ল্যাপটপের বেসিক ধারণা রাখা। মোবাইল বিষয়েও ভালো পারদর্শিতা অনেক ক্ষেত্রে  কাজে দিবে। কম্পিউটারের বেসিক ধারণার মধ্যে পড়ে কিবোর্ড মাউস বিষয়ে ভালো একটি ধারণা। টাইপিং বিষয়ে ভালো ধারণা। ইন্টারনেট এবং ব্রাউজিং বিষয়ক ভালো ধারণা। মোটামুটি কয়টি ধারণা নিয়ে রাখা উচিত। 
ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে ইংরেজি বিষয়েও ভালো ধারণা থাকা দরকার। এখন অনেকেই বলবেন ইংরেজিতে আমরা দুর্বল। হ্যাঁ ইংরেজিতে দুর্বল হলেও সেটা লেখার ক্ষেত্রে, কেননা গ্রামটিক্যাল ফল্ট শুধুমাত্র লেখার ক্ষেত্রেই বেশি লক্ষ্য করা হয়। কিন্তু কথোপকথনের ক্ষেত্রে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে না। আপনাকে বিদেশি বায়ারদের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমেই কিন্তু একটি কাজ নিতে হবে। তাই ইংরেজিতে দক্ষতা থাকা আবশ্যক।

আবার আপনার ধৈর্য, অধ্যবসায় এবং সময়ানুবর্তিতা থাকাটা অতীব জরুরী। কারন আপনি পরিশ্রম করার ধৈর্য না রাখলে কখনোই সফলতা পাবেন না। একবার পরিশ্রমে সফল না হলে বারবার চেষ্টা করাটাই হলো অধ্যাবসায়ী। বারবার চেষ্টা করার প্রবল ইচ্ছা যদি না থাকে আপনার তবে আপনি সেখানেও সফল হতে পারবেন না। সবশেষে প্রত্যেকটা কাজের জন্যই আপনাকে সময়ানুবর্তিতা হতে হবে অর্থাৎ সময় মেনে কাজ করতে হবে।

ফ্রিল্যান্সিং এর ভালো স্কিল নির্ধারণ করা 

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে একটি ভালো স্কিল নির্ধারণ করা আবশ্যক। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজসমূহ করার জন্য প্রয়োজনীয় স্কেল গুলোকে মূলত তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
  1. সহজ স্কিল, 
  2. ইন্টারমিডিয়েট স্কিল ও 
  3. কঠিন স্কিল 
সহজ স্কিল হলো সেসব স্কিল যা আপনি ১-৩ মাসের মধ্যে শিখতে চান। এসব নিয়ে ইন্টারনেটে ভালো রিসার্চ করতে পারেন। সহজে দক্ষতা অর্জন করার সক্ষমতা থাকে। ইংরেজি ভাষায় যদি ভালো দক্ষতা থাকে। সহজ স্কেল গুলো কম সময়ের বলে এগুলো নতুনদের জন্য খুবই পছন্দনীয় একটা সেক্টর হবে। এ কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে:-ডাটা এন্ট্রি, আর্টিকেল রাইটিং, এডমিন টাস্ক, ছোট ছোট ডিজাইন স্কিল(ব্যানার অথবা বিজনেস কার্ড ডিজাইন)

এবার আসি ইন্টারমিডিয়েট স্কিল কাদের জন্য প্রযোজ্য। যারা ৩-৬ ছয় মাসের শিখতে চান, আপনার ভালো কনফিগারেশনের ল্যাপটপ অথবা কম্পিউটার আছে, আপনি বেশ টেক বিষয়ে কৌতুহলী এবং এনালিটিক্যাল স্কিল আছে। ইন্টারমিডিয়েট স্কেল তখন শিখবেন যখন আপনার মনে হবে আপনি শুধু ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজসমূহ মার্কেটপ্লেসে নয় বরং বাইরের ক্লায়েন্টের জন্য করবেন। এর কাজগুলো হলো:-ডিজিটাল মার্কেটিং, ডিজাইন, ওয়ার্ডপ্রেস কাস্টমাইজেশন ইত্যাদি।

সর্বশেষ কঠিন স্কিল যারা ৬+ মাস সময় দিয়ে স্কিল শিখতে চান, ভালো প্রোগ্রামিং/ডিবাগিং স্কিল রয়েছে, সফটওয়্যার বিষয়ে ভালো জ্ঞান রয়েছে এবং প্রতিদিন ২-৪ ঘন্টা প্র্যাকটিসে সময় দিতে পারবেন তাদের জন্য প্রযোজ্য। যদি সময় দিয়ে কঠিন স্কিল শিখতে পারেন, তো দেশীয় ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি করার সুযোগ পাবেন। কঠিন স্কিল ক্যাটাগরির মধ্যে পড়ে:-প্রফেশনাল গ্রাফিক্স ডিজাইন, প্রফেশনাল ভিডিও এডিটিং ইত্যাদি।

মার্কেটপ্লেসে ফ্রিল্যান্সিং এর স্কিল রিসার্চ করা

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে ফ্রিল্যান্সিং-এর সকল স্কিল নিয়ে  প্রত্যেকটা মার্কেটপ্লেসে রিসার্চ করা আবশ্যক। এখানে আপনি জানতে পারবেন কোন স্কেলের কাজ কি রকম হয়ে থাকে। এছাড়া, আমাদের সবার উচিত শুরুতে মার্কেটপ্লেসে প্রোফাইল নাম ক্রিয়েট করে প্রথমে হোমপেজে রিসার্চ করা। উপরোক্ত ধাপগুলো শেষ করে তবে আপনি মার্কেটপ্লেসের চলমান কাজ দেখে দেখে রিসার্চ করবেন। চাইলে নোট করেও রাখতে পারেন। 

এখন প্রশ্ন হচ্ছে মার্কেটপ্লেস-এ কি চার্জ করবো? সর্বপ্রথম মার্কেটপ্লেসের ক্যাটাগরি রিসার্চ করবেন, এরপরে ফ্রিল্যান্সারদের প্রোফাইল চেক করবেন, তাদের ওভারভিউ বা রিভিউ দেখবেন এবং ফ্রিল্যান্সারদের পোর্টফোলিও ডিজাইন দেখবেন। এ থেকে আপনার পোর্টফোলেও তৈরি করতে এবং কাজ বিষয়ে অবগত হতে যথেষ্ট উপকার হবে বলে আমি মনে করি। 

ফ্রিল্যান্সিং শিখতে হলে মার্কেটপ্লেসে গিয়ে রিসার্চ করার মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন নির্ধারিত স্কিলটি শিখতে আপনাকে আসলে কি কি বিষয় শিখতে হবে। কেননা যত ঘাটাঘাটি করবেন ততই তার শিরা-উপশিরা খুঁজে পাবেন। প্রত্যেকটা বিষয় আপনার কাছে ক্লিয়ার হতে থাকবে। আর এসব মার্কেটপ্লেসে রিসার্চ এর মাধ্যমেই আপনি জানতে পারবেন কোন স্কিল আপনার জন্য ভালো হবে বা কোন স্কিল জন্য কি কি সেটা প্রয়োজন।

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ ও এর ধরণ

ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে আপনি তিন ধরনের কাজ করতে পারবেন:-

1. লং টার্ম (১-৬ মাস)
2. শর্ট টার্ম (১-৪ সপ্তাহ)
3. কমপ্লেক্স প্রজেক্ট (স্পেসিফিক রিকোয়ারমেন্ট) 

প্রত্যেক কাজে আপনাকে দুই ধরনের প্রজেক্ট প্রাইস (প্রতি ঘন্টা/একদাম) সেট করতে হয়।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং-এর ১০টি জনপ্রিয় কাজ
যেকোনো ক্যাটাগরি সিলেক্ট করলে আপনার কাছে আপনার স্কিল লেভেল জানতে চাওয়া হবে এবং আপনি এন্ট্রি, ইন্টারমিডিয়েট অথবা এক্সপার্ট লেভেল দিতে পারেন। শুরুর দিকে যেহেতু আপনার রিসার্চ করছেন "এন্ট্রি লেভেল" অপশনটা পছন্দ করতে হবে। পরবর্তীতে মার্কেটপ্লেসে একবার খাপ খেয়ে ফেলতে পারলে নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার স্কিল লেভেল আসলে কেন। 

মার্কেটপ্লেসে এমন কিছু স্কিলের চাহিদা রয়েছে যা আমাদের আগে থেকেই জানা থাকে। আবার এমন স্কিলের ও চাহিদা আছে যা সাধারণত প্রয়োজন বা লক্ষ্য ছাড়া কেউ শেখেনা। অর্থাৎ যেটা জানা নেই সেটা শিখতে হবে আর যেটা জানা আছে তা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। রিসার্চ করার মাধ্যমে আপনি নিজের বর্তমান অবস্থা ও কোথায় কোথায় কাজ করতে হবে সেগুলো সম্পর্কে ভালো ধারণা পাবেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ অনুযায়ী এর আয় কেমন

ফ্রিল্যান্সিং শেখার আগে থেকেই প্রত্যেকের মাথায় ঘুরে কোন স্কিলের আয় কেমন। আপনার স্কিল অনুযায়ী আপনার আয় এটা খাঁটি সত্য কথা। কেননা চাঁদের কাজ যত কষ্টের তাদের পারিশ্রমিক তত বেশি এটা সকলেই জানেন। তেমনি কাজ এবং পরিশ্রমের উপরে বিবেচনা করে প্রত্যেকটা কাজের একটা নির্ধারিত পারিশ্রমিক থাকে। যা প্রত্যেকটা ফ্রিল্যান্সার ন্যায্য ভাবে পাই।
কিভাবে ফ্রিল্যান্সিং শিখব 2024
ফ্রিল্যান্সিং হল একটি মুক্তপেশা, এটা যেমন  বাসায় বসে থেকে করা যায় তেমনি বেতন অনির্ধারিত। প্রত্যেকটা ফ্রিল্যান্সার নিজের বেতন নিজেই ঠিক করতে পারেন। তার কাজ, কাজের কোয়ালিটি, টাইম ম্যানেজমেন্ট এবং ক্লায়েন্টদের সাথে তার ব্যবহার সবকিছুই যখন ভালো হয় তখন প্রত্যেকটা ক্লায়েন্টই তাদের খুশি মনে পেমেন্ট করে থাকেন। তাই ক্লায়েন্টের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। 

ফ্রিল্যান্সিংয়ের ৩ প্রকার স্কিলের মধ্যে প্রথম যেটা উল্লেখ করেছিলাম 'সহজ স্কিল' যার সর্বনিম্ন ৫ ডলার থেকে শুরু করে ৫০ ডলার অব্দি আয় করার সুযোগ থাকে। এটা প্রত্যেকটা মার্কেটপ্লেস-এর গড় হিসাব। এবং ইন্টারমিডিয়েট স্কিলের সর্বনিম্ন ১৫ থেকে ৬০ ডলার পর্যন্ত আয় করার সুযোগ থাকে। আর যারা রয়েছেন কঠিন স্কিল অর্থাৎ এক্সপার্ট তাদের সেলারি ১০০ ডলারের অধিক হয়ে থাকে। আবারো বলছি এটা প্রতি ঘন্টার ইনকাম।

মার্কেটপ্লেসে কিভাবে কাজ পাওয়া যাবে 

ফ্রিল্যান্সিং শেখার পরের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল কাজ পাওয়া। এখন প্রত্যেকটা এলাকায় ১০০ জনের মধ্যে ২-৩ জন ফ্রিল্যান্সার। তাই এ কাজের প্রতি মানুষের চাহিদা বেশি। একটা কাজের জন্য ২-২.৫ হাজার ফ্রিল্যান্সার লড়াই করেন। ক্লাইন্টরা তাদের রিভিউ দেখেই তাদেরকে কাজে হায়ার করেন। আপনার আমার মত নতুনদের এখানে জায়গা নেই । ঠিক তেমনটা না। 

মার্কেটপ্লেস এখন প্রফেশনাল ফ্রিল্যান্সারগণ রাজত্ব করছেন। কিন্তু এখানে কিছু ট্রিক্স করাতে হবে। যদি আপনি মার্কেটপ্লেসেই কাজ করতে চান, তবে অবশ্যই অবশ্যই আপনাকে ফ্লার্টিং স্কিল টা রাখতে হবে, অর্থাৎ মানুষকে কথা দিয়ে মুগ্ধ করার প্রতিভাটা আপনার মধ্যে থাকতে হবে। ক্লায়েন্টের কাছে এমন ভাবে এপ্লিকেশন করতে হবে যেন তারা আপনাকে কাজ দিতে বাধ্য হয়।
আরো পড়ুনঃ ফ্রিল্যান্সিং-এর জন্য ১০টি সেরা মার্কেটপ্লেস
মার্কেটপ্লেসের বাইরেও অনেক সুযোগ আছে যেখানে আপনি কাজ নিতে পারেন। যেমন বিভিন্ন রকম সোশ্যাল মিডিয়া এর মধ্যে টেলিগ্রাম, লিংককেডিং, হোয়াটসঅ্যাপ সহ অন্যান্য। এসবের মাধ্যমে আপনি বিভিন্ন দেশের ক্লাইন্ট ম্যানেজ করতে পারবেন। তবে তার জন্য অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। যদি একবার তাদের আপনার কাজ পছন্দ হয়, তো আপনি তাদের কাছে লাইফ টাইম এর জন্য কাজ করার সুযোগ পেতে পারেন।

নতুনদের জন্য কিছু সেরা টিপস 

  • সব সময় জবের ডেসক্রিপশন মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। কারণ প্রত্যেকটা প্রজেক্ট ভালোভাবে বুঝে ক্লায়েন্টকে জানাতে হবে আপনি কিভাবে তার প্রজেক্ট কমপ্লিট করতে পারবেন। 
  • আমাদের দেশে আমরা সাধারণত কাউকে স্যার/ম্যাম বলে সম্বোধন করি। তবে ক্লায়েন্টদের সাথে মিস্টার অথবা মিসেস (উনার নাম) দিয়ে সম্বোধন করলেও তারা কিছু মনে করবেন না। 
  • কাজের কথা বলবেন কিন্তু ক্লায়েন্টের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে। সব সময় ওয়েবসাইট দেখে অথবা ফেসবুক দেখে ক্লায়েন্টদের সার্ভিস বা বিজনেস নিয়ে অনেক কিছু সুচিন্তিত পরামর্শ দিবেন। এতে করে সে বুঝবে আপনার রিসার্চ করার ক্যাপিবিলিটি ভালো এবং আপনি প্রজেক্টটিকে তার মনের মত করে গ্রুপ করে দিতে পারবেন।
  • সম্ভব হলে ক্লায়েন্টের সাথে সোশ্যাল মিডিয়া বা স্কাইপে যুক্ত থাকবেন এতে করে তার যদি পরবর্তীতে কোন প্রজেক্ট আসে সে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে এবং কাজ দিতে পারেন অথবা অন্যদেরকে রিকমান্ড করতে পারেন। 
  • ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাওয়ার বুস্টার হচ্ছে আপনার প্রোফাইল। আর এখনকার যুগে ভিডিও কনটেন্ট সবচেয়ে শক্তিশালী মেসেজ দিতে পারে। তাই আপনি আপনার প্রোফাইলে একটি পোর্টফোলিও আকারে ভিডিও কনটেন্ট পাবলিশ করে রাখতে পারেন। পরে আপনার ক্লায়েন্ট বুঝতে পারবে আপনি কতটা প্রফেশনাল। 
  • প্রজেক্ট শেষ হবার পরেও ক্লায়েন্টদেরকে অনেকদিন পর পর মেসেজ দিয়ে খোঁজ রাখতে পারেন, তাদের কুশলাদি জিজ্ঞেস করতে পারেন। এতে করে ক্লায়েন্ট মনে করেন আপনি শুধু তার প্রজেক্ট নিয়েই নয়, বরং আপনাদের মধ্যকার ওয়ার্ক রিলেশনশিপ নিয়েও যত্নবান। পরবর্তী বার যখন তার একই সার্ভিস প্রয়োজন হবে, অবশ্যই সে আপনাকে মনে করবেন।

শেষ কথা 

আমাদের আজকের টপিক ছিল ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে শিখবো। আশা করি আজকের পোস্টটি আপনাদের জন্য অনেক উপকৃত হয়েছে। আপনারা কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে আমাদেরকে জানাতে পারেন পোস্টটা কতটা হেল্পফুল হয়েছে। কোন ভুল-ভ্রান্তি পেয়ে থাকলে অবশ্যই নিচে দেওয়া বাটনে ক্লিক করে আমাদের এডমিন কে জানাতে পারেন। 

ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে অনেক ধাপ রয়েছে, অনেক রিসার্চ করার আছে। যা সম্পূর্ণ না করে আপনি কখনো ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে নামার কল্পনাও করবেন না। আর মুক্ত পেশায় স্বাধীনতার সাথে কাজ করতে হলে, অবশ্যই নিজের ভেতরের ধৈর্য এবং পরিশ্রমকে সর্বদা সচল রাখতে হবে। সঠিক নিয়মে যদি ফ্রিল্যান্সিং শিখতে চান আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আর্টিকেল রাইটিং এবং ডিজিটাল মার্কেটিং কোর্স শিখিয়ে থাকি।

প্রত্যেকটি পাঠকের উদ্দেশ্যে বলছি অবশ্যই আপনাদের বন্ধুদের সাথে পোস্টগুলা শেয়ার করে তাদেরকে পড়ার সুযোগ করে দিবেন। কেননা জানার শেষ নেই। বাঁচতে হলে জানতে হবে। আর যত জানবেন আগামীর পথ ততই সহজ হবে। তাই প্রত্যেককে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করার আগে আমাদের পোস্টটি অবশ্যই পড়তে বলবেন যেন তারা সঠিকভাবে দিকনির্দেশনা পায়। ভুল পথে গিয়ে যেন সময় ও অর্থ অপচয় না করে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

স্ক্রোলিং ষ্টেশন ২৪-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url