মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স এর লক্ষণ কি ?
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স করোনার চেয়েও বড় মহামারী।তাই আমাদের জানা
উচিত এই রোগটি কি, কেমন(ছোঁয়াচে বা অছোঁয়াচে),ছড়ানোর কারন, লক্ষণ ও প্রতিরোধে করনীয়
কি? সে সকল ধারণা গুলো আজ আমারা তুলে ধরব।
আন্তর্জাতিক উদ্বেগ থেকে আফ্রিকার কিছু অংশে মাঙ্কি পক্স বা এমপক্সের
প্রাদুর্ভাবকে জরুরী জনসাস্থ্য অবস্থা হিসেবে ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
(ডব্লিউ এইচ ও)।মাঙ্কিপক্স বা এম পক্স নামে পরিচিত অত্যন্ত সংক্রামক এই রোগে
গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রে অন্তত ৪৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নিচের যে অংশ থেকে পড়তে চান
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কি
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স হলো গুটিবসন্তের একটি গোত্রের ভাইরাস যা সাধারণত কম
ক্ষতিকারক। মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স-কে কেউ কেউ আবার বানর বসন্ত ও বলে থাকে। মূলত
বানরের শরীর থেকেই এই রোগের ভাইরাসটি পাওয়া গেছিল।
মাঙ্কিপক্স
ভাইরাস(MPV, MPXV বা hMPXV) হলো ডাবল স্ট্যান্ডেড ডিএনএ ভাইরাসের একটি প্রজাতি যা
মানুষ এবং অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে এমপক্স রোগ সৃষ্টি করে। এটি একটি
জুনোটিক ভাইরাস যা অর্থপক্সভাইরাসগণের অন্তর্গত, এটি ভ্যারিওলা, কাউপক্স এবং
ভ্যাকসিনিয়া ভাইরাসের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কি বানর থেকে হয়
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স নাম কেন হলো? বানরের সঙ্গে কি সম্পর্ক?
এর উত্তরে আমি
বলব না বানরের সাথে কোন সম্পর্ক নেই বা এমন নয় যে এই রোগটি বানরের সংস্পর্শে গেলেই
কোন ব্যক্তি আক্রান্ত হবে।
আরো পড়ুনঃ চুলকানি দূর করার ঘরোয়া উপায়
আক্রান্ত হওয়ার মেইন কারণ হলো এই ভাইরাসটি শুধু বানরে বানরে নয় গরু, ছাগল,
মানুষ এমনকি মুরগিতেও ছড়াতে পারে। এ ভাইরাসের বিশেষ বৈশিষ্ট্য এরা ডিএনএ ভাইরাস
এবং যেসব প্রাণীর শরীরে 2n সংখ্যক ডিএনএ বিদ্যমান তাদের শরীরেই এই রোগটি ছড়াবে।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স সর্বপ্রথম যুক্তরাজ্যের সেন্টার ফর ডিজিজ
কন্ট্রোল এন্ড প্রিভেনশনের তথ্য মতে, ১৯৫৮ সালে এক গবেষণাগারে বানরের মধ্যে প্রথমে
রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে। সেখান থেকেই এ নামকরণ করা হয়।
১৯৭০ এর দশকে
কঙ্গোতে বিশ্বের প্রথম মাঙ্কি পক্স বা এমপক্স এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। বানর
ছাড়াও কাঠবিড়ালি ইঁদুর জাতীয় প্রাণী এ রোগের বাহক হতে পারে।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কি ভাবে ছড়ায়
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স প্রধানত সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়
যার মধ্যে রয়েছে:-
• শারীরিক সম্পর্ক
•ত্বকের স্পর্শ
•শ্বাস
প্রশ্বাস
ভাইরাসটি শরীরে প্রবেশ করে ভঙ্গুর ত্বক, চোখ, নাক বা
মুখের মধ্য দিয়ে। এছাড়া ভাইরাস লেগে থাকা বস্তু যেমন বিছানা পত্র জামাকাপড় এবং
তোয়ালে স্পর্শ করে এটি ছড়াতে পারে সংক্রমিত পশুদের মাধ্যমে যেমন বানর ইদুর এবং
কাঠবেড়ালো ভাইরাসটি ছড়াতে পারে।
২০২২ সালে মাঙ্কিপক্স বা
এমপক্স ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কের ভূমিকা ছিল।
সংক্রমনের
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি থাকা গোষ্ঠীগুলির মধ্যে রয়েছে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে সক্ষম
ব্যক্তি এবং সমকামী পুরুষরা। তবে সংক্রমিত ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ সম্পর্কে আসা যে কেউই
সংক্রমিত হতে পারেন যার মধ্যে স্বাস্থ্য কর্মী এবং রোগীর পরিবারের সদস্যরা
অন্তর্ভুক্ত।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কোথায় দেখা যায়
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স গণতান্ত্রিক কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মতে পশ্চিম এবং মধ্য
আফ্রিকার গ্রীষ্মমন্ডলীয় রেইনফরেস্ট সমৃদ্ধ দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম গুলোতে বেশি
দেখা যায়।
এ অঞ্চল গুলোতে প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ এতে আক্রান্ত হয় আর শত শত
মানুষের মৃত্যু হয়, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৫ বছরের কম বয়সী
শিশুরা।
আরো পড়ুনঃ মোটা হওয়ার সহজ উপায়
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স ২০২৪ সালে কিভাবে ছড়ালো
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স বর্তমানে অনেকগুলো দেশে বিভিন্ন প্রাদুর্ভাব একইসঙ্গে দেখা
যাচ্ছে- বিশেষ করে কঙ্গো এবং এর প্রতিবেশী দেশগুলোতে। রক্তের সম্পতি বুরুন্ডি,
রুয়ান্ডা, উগান্ডা এবং কেনিয়াতে দেখা গেছে যা সাধারণত সেখানে দেখা যায় না।
সে সব দেশে যারা প্রবাসী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় আছেন বা যারা
পর্যটক হিসেবে সেসব দেশে ভ্রমণে অংশগ্রহণ করেছেন তাদের মাধ্যমে মূলত রোগটির
প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে।মোটা দাগে এম বক্সে দুটি ধরন রয়েছে- ক্লেড ১ যা
সাধারণত আরো গুরুতর হয় এবং ক্লেড ২।
ক্লেড ১'র ভাইরাসটি কয়েক
দশক ধরে কঙ্গোতে বিক্ষিপ্ত প্রাদুর্ভাবের কারণ ছিল এবং এখন ছড়িয়ে পড়া ধরনটি ও
এটি।ক্লেড ১'র কিছু ধরনের প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হবার
প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
আফ্রিকা সেন্টার ফর ডিসিস কন্ট্রোল এন্ড
প্রিভেনশন বলছে ২০২৪ সালের শুরু থেকে জুলাইয়ের শেষ পর্যন্ত সাড়ে ১৪ হাজারেও
বেশি মানুষ মাঙ্কি পক্স বা এম্পক্স-এ আক্রান্ত হয়েছে আর এতে ৪৫০ -এরও বেশি মানুষ
মৃত্যুবরণ করেছে।এই সংখ্যা ২০২৩ সালের একই সময়ের তুলনায়
সংক্রমনের ক্ষেত্রে ১৬০ শতাংশ এবং মৃত্যুর ক্ষেত্রে ১৯ শতাংশ বেশি।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কিভাবে শুরু হয়
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স ভাইরাসের সংক্রমণের ৫ থেকে ২১ দিনের মাথায় উপসর্গগুলো দেখা
যায়। প্রারম্ভিক উপসর্গগুলির মধ্যে আছে জ্বর, পেশী ব্যথা, পিঠ ব্যথা, স্ফীত
লিম্ফ নোড, ঠান্ডা লাগা এবং ক্লান্তি।
আরো পড়ুনঃ১৫ দিনে ওজন বৃদ্ধি করার ঘরোয়া উপায়
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্সের প্রাথমিক লক্ষণ কি
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স এর
প্রাথমিক লক্ষণগুলো হলো:-
• জ্বর বা শরীরে তাপমাত্রা বৃদ্ধি
• পেশীর
ব্যথা (হাত-পা নড়াচড়া করতে কষ্ট হবে)
•সমস্ত পিঠে ব্যথা থাকবে
•স্ফীত
লিম্ফ নোড (গলার দুই পার্শের লসিকতন্ত্র হালকা ফুলে যাবে এবং ব্যথা করবে)
•ঠান্ডা লাগা (সর্দি এবং শুকনো কাশি)
•অল্প পরিশ্রমে ক্লান্তি চলে
আসবে
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কতদিন থাকে বা এর সময়সীমা
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স এর সময়সীমা নিয়ে মতভেদ আছে। কোন কোন রিসার্চে বলা হয়
২৫ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। আবার কেউ কেউ বলে এক থেকে দেড় মাস
সময় লাগে।
আরো পড়ুনঃ
তবে মাঙ্কি পক্স বা এমপক্স এর গড় সময়সীমা ধরা হয় চার থেকে
ছয় সপ্তাহ একটি রোগীকে এই রোগের অভিজ্ঞতা বহন করতে হবে।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স এর ফুসকুড়ি দেখতে কেমন
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স এর প্রাথমিক উপসর্গের এক থেকে তিন দিন পরে একজন
মানুষের শরীরে ফুসকুড়ি বা ক্ষত তৈরি হয়।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্সের ফুসকুড়ি মুখে শুরু হয় এবং তারপর
শরীরে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে। একজন ব্যক্তির দুই থেকে চার সপ্তাহ পর্যন্ত
উপসর্গগুলি অভিজ্ঞতা হবে।এতে বিশেষ করে মুখ,পিঠ এবং যৌনাঙ্গ বেশি আক্রান্ত হয়।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স হলে করনীয় কি
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স হলে করণীয় কি? অথবা মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স হলে কিভাবে
প্রতিরোধ করব?
•অসুস্থ হতে পারেন এমন মানুষের সংস্পর্শে আসা এড়িয়ে চলতে হবে।
•অসুস্থ
মানুষের ব্যবহার করা জিনিসপত্র,যেমন:- বিছানার সাথে সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
•সাবান
ও পানি দিয়ে ঘন ঘন হাত পরিষ্কার করা অথবা হ্যান্ডসেটে যায় ব্যবহার করা।
•অন্যদের
আশেপাশে থাকার সময় একটি ফেস মাস্ক ব্যবহার করা।
•মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স
এড়ানোর জন্য স্মল পক্সের টিকাও সাহায্য করতে পারে।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কি নিরাময় যোগ্য
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স একটি নিরাময় যোগ্য রোগ। এ সময় উদাসী হয়ে থাকা যাবে না।
সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার, পরিবারের অন্যান্য
সদস্যের সাথে কম মেলামেশা কম করা, নিজের ব্যবহারের জিনিসপত্র যেমন:-পোশাক,
তোয়ালে, খাবার গ্লাস, সাবান সহ শোবার স্থান।
আরো পড়ুনঃ
শরীরের ব্যথার বা লিম্ফ নোড স্ফীতির জন্য প্রাথমিকভাবে যেসব ব্যথা নাশক
প্যারাসিটামল অথবা অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ রয়েছে সেগুলো ব্যবহার করা। অবস্থা
অস্বাভাবিক হলে সরকারি হাসপাতাল অথবা নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
এছাড়াও ফুসকুড়ি শুকিয়ে যাবার পর যে খোসা বা চামড়া পড়ে যায়
সেগুলো একত্রিত করে মাটির নিচে পুতে ফেলা অথবা পুড়িয়ে ফেলা, যেন বাতাসের
মাধ্যমে সেগুলো অন্য কাউকে আক্রান্ত করতে না পারে।এক কথায় সতর্ক এবং মানসিক বল
থাকলে এই রোগ নিরাময় করা সম্ভব।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স এর চিকিৎসা
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স আক্রান্ত রোগীর মুখে এবং শরীরে ফুসকুড়ি সহ ফ্লু জাতীয়
অসুস্থতা যদি হয় এবং লিম্ফ নোড যদি ফুলে যায়, তাহলে আপনারা নিকটস্থ চিকিৎসকের
সাথে যোগাযোগ করুন।
বর্তমানে মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স এর কোন প্রমাণিত বা নিরাপদ চিকিৎসা নেই।
কিন্তু স্মলপক্স এর টিকা এবং কিছু অ্যান্টিভাইরাল মাঙ্কিপক্সের চিকিৎসা করার
জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপরোক্ত লক্ষণ বা উপসর্গ গুলো দেখা গেলে যত দ্রুত সম্ভব আপনারা নিকটস্থ
সরকারি হাসপাতাল অথবা নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মনে রাখবেন রোগ আল্লাহর অসীম রহমত যা কোন বান্দা পছন্দ করে না রোগ
থাকবেই, রোগের চিকিৎসা ইনশাল্লাহ আল্লাহই দিবেন। শুধু ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করাটা
আপনার কাজ এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে আল্লাহ অবশেষে শিফাহ দান করবেন ।
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স কি আবার ফিরে আসতে পারবে
মাঙ্কিপক্স বা এমপক্স একবার সেরে ওঠার পর কি আবারো হতে পারে?
এমন
প্রশ্নের উত্তরে ডা: জয়দীপ ঘোষ জানালেন মাঙ্কিপক্স একবার সেরে ওঠার পর শরীরে
এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যায়। তাই পরবর্তী সময় এই ভাইরাস
শরীরে আক্রমণ চালালেও তার থেকে সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না বললেই চলে।
স্ক্রোলিং ষ্টেশন ২৪-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url